কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কাগজি লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অধীর চন্দ্র রায়(৫৩) নামের এক লেবু চাষী। তিনি মাত্র ৬৫ শতক জমিতে ১০০কলম চারা লাগিয়ে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রতিবছর ১০০কলম চারা থেকে প্রায় দেড় থেকে ২লাখ লেবু উৎপাদন করে বাজারে লেবুর চাহিদা পুরণ করেছেন। সেই সাথে এলাকার মানুষের চাহিদাও পুরণ করে চলছেন এই চাষী। এলাকার মানুষ তাকে লেবুর রাজা অধীর বলেই চেনেন। সফল এই চাষীর বাড়ি উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরের বাড়ী খিলপাড়া গ্রামে।
অধীর চন্দ্র রায় বলেন, ১৯৯৬ সালের বুধবার লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ীহাটের দিন মাত্র পঁচিশ টাকা দিয়ে ৪টি গোল কাগজি লেবুর চারা ক্রয় করে বাড়ির উঠানে লাগান। দেড় বছর পর ওই চারটি গাছে প্রায় ৮শতাধিক লেবু উৎপন্ন হয়। কিন্তু লেবু গুলো বিক্রি করা হয়নি। একদিন এক লোক এসে লেবুগুলো দেখে দর দাম করে প্রায় ১৪শত টাকা দিয়ে নিয়ে যায়। এরপর লেবুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। একদিন রংপুরের কাঁচা আড়তে গিয়ে লেবুর অগ্নি দাম দেখে মাথায় বাজ পড়ে যায়। রংপুরেও লেবু বিক্রি করে লাভবান হই। সেখানে লম্বা জাতের কাগজি লেবুর ব্যাপক চাহিদা দেখে বাড়িতে ফিরে কলম চারা খুঁজতে থাকি। ২০০০সালে আমার জ্যাঠাতো ভাইয়ের বাড়ির উঠানে এ জাতের লেবুর গাছ দেখে প্রায় প্রতিটি কলম চারা বিশ টাকার বিনিময়ে ৪০টি চারা ক্রয় করে ২১শতক জমিতে রোপন করি। সেখান থেকে লাভবান হওয়ার পর অন্য আরেকটি ৪৪শতক জমিতে ৬০টি লম্বা জাতের কাগজি লেবুর কলম চারা রোপন করি। ৩বছর পর বাগান দুটো থেকে প্রতিবছর প্রায় দেড় থেকে ২লাখ লেবু উৎপন্ন হয়। আমি হিসেব করে দেখেছি, ধান রোপনের চেয়ে লেবু উৎপাদন করলে কয়েকগুন লাভ হয়। ৬৫শতক জমিতে ধান আবাদ করলে প্রতি মৌসুমে ৪০মণ ধান পাওয়া যেত। সেখানে খরচ বাদে লাভ হতো ৮থেকে ১০ হাজার টাকা। আর বছরে দুটি মৌসুমে লাভ হবে ২০ হাজার টাকা। সেখানে প্রতিবছর খরচ বাদে লাখ টাকা লাভ করা যায়। এ ছাড়া খরচও কম হয় লেবু চাষে। অধীর চন্দ্র রায়ের লেবু বাগান দেখে অবাক হয়েছেন অনেকে। তার বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার প্রায় ২০জনচাষী লেবু চাষের উপর ঝুঁকে পড়েছেন। এ ছাড়া দূর দুরান্ত থেকে অধীর বাবুর লেবু বাগান দেখে বাগান তৈরির জন্য আগাম পরামর্শ নিয়েছেন অনেকে। লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী অধীর চন্দ্র রায় সংসারের খরচের পাশাপাশি এক ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি আগে দুবেলা দু’মুঠো ভাত ঝুঁটতো না। এখন লেবু চাষ করে দামী মটর সাইকেল, পাকা বাড়ি নির্মাণ করে ফ্রিজ, আলমারীসহ সংসারের নিত্য দিনের খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বিষ্ণুপদ রায়, বিলাশ চন্দ্র, সুখ রঞ্জন, দুলাল হোসে পাটোয়ারীসহ অনেকে জানান, আমাদের বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে অধীর বাবুর বাগান থেকে বিনা পয়সায় কাগজি লেবু নিয়ে আসি।
এব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুর নাহার সাথী বলেন, অধীর বাবু দীর্ঘদিন ধরে লেবু চাষ করে আসছেন। এখন তিনি সফল চাষী। প্রতিবছর লেবু বাগান থেকে কয়েক লাখ টাকা ইনকাম করেন।