চাঁদপুর মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে আলোচিত সেই ‘বালুখেকো’ ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানকে পৌনে ৩০০ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চিঠি দিয়েছেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত সেলিম খান কোনো টাকা জমা দেননি বলে জানান চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। তিনি বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে অনতিবিলম্বে ওই টাকা সরকারি কোষাগারে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো টাকা জমা দেননি তিনি। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত ২০১৮ সালের মে মাস থেকে শুরু করে ২০২২ সালে এপ্রিল পর্যন্ত মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান শতাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে চাঁদপুরে মেঘনার ২১টি মৌজা থেকে বালু উত্তোলন করে। এতে গত ৫ বছরে ৬৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৯ হাজার ৮৫ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হয়েছে; যার মূল্য প্রতি ঘনফুট ৪০ পয়সা হারে মোট টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ ৩১ হাজার ৮০০ টাকা। এই পরিমাণ টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি কোষাগারে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। সেলিম খান চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তিনি মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজের মালিক। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে বছরের পর বছর বালু তুলে বিক্রি করেন। তার বিরুদ্ধে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করার অভিযোগও রয়েছে। তিনি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন। সেলিম খান এখন চাঁদপুরেই অবস্থান করছেন।তাকে হরহামেশাই চাঁদপুর সদর ইউএনও অফিস,সদর মডেল থানা,শিক্ষামন্ত্রীর চাঁদপুর শহরের বাসভবনসহ বিচরণ করতে দেখছে আমজনতা। এর আগে হাইকোর্টের আপিল বিভাগে সেলিম খানের বালু উত্তোলন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি পিটিশন করা হয়। আর সেই পিটিশনের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান সেলিম খানের মালিকানাধীন মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজের বালু উত্তোলন নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এবং সরকারের আরও কয়েকটি সংস্থা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মেঘনা নদীর উল্লিখিত ২১টি মৌজার ইমেজ সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে বালু উত্তোলনের পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রায় পৌনে ৩০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার এই নির্দেশ দেয়া হয়। আলোচিত এই চেয়ারম্যান একজন হাইব্রিড আওয়ামীলীগ। গত ১৫ বছরে বালু উত্তোলনের বিপুল অর্থে তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।তার কোন কিছুই ছিলো না।এখন তার জমিদারি স্টেট এর মত একাধিক বাড়ি,গাড়ি,ধন সম্পদ জায়গা জমি,পত্রিকা,টিভি চ্যানেলসহ সবকিছুই আছে।এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে তার সকল কর্মকা-ই প্রতারণা জালিয়াতি ও অবৈধ অর্থ উপার্জন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। চাঁদপুরের প্রায় ৯০টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনি একজন ইউপির চেয়ারম্যান হয়ে সবকিছু দাবিয়ে বেড়াতেন, খাটাতেন দুর্দান্ত প্রতাপ। তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কোন মানুষ কিছু বলা দূরে থাক প্রতিবাদ করার সাহসও পায়নি। ইউপি চেয়ারম্যান হতেও প্রতারণা ও দলীয় প্রভাব বিস্তারে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই সময় সেলিম খান ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরের পাঁচ বছর সীমানা জটিলতা বেনামে মামলা করিয়ে দায়িত্ব পালন করেন আরো পাঁচ বছর। পরবর্তীতে আবার নির্বাচন হলে কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হতে না দিয়ে তার পুরোপরিষদসহ নিজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যান। এই সেলিম চেয়ারম্যান দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ চাঁদপুর মেঘনা নদীর বালু উত্তোলন ও বিক্রির টাকায় গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে গড়ে তুলেছেন ভারতীয় তামিলনাড়ুর আদলে বিরাট অট্টালিকা। এলাকার বিস্তৃীর্ণ কৃষিজমি নষ্ট করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ১৫ বছরে এই লোক আওয়ামী লীগ করে এত ধনসম্পদের মালিক বনে যাওয়াকে আলাদ্দিনের চেরাগ হিসেবে দেখছেন দলেরই সাধারণ নেতাকর্মীবৃন্দ। দল করি আমরা আর টাকা পয়সা,ধন-সম্পদের মালিক হয় কে? এমন ক্ষোভ লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের পুরাতন আওয়ামী লীগের। উল্লেখ্য, সেলিম খান শুধু ২০১৮ সাল থেকেই নয়,এর আগে ২০০৮ সাল থেকে নদীর নাব্যতার জন্য খনন করার কথা বলে বিআইডব্লিউটিএ থেকে ৩০ লক্ষ ও ২০ লক্ষ মোট ৫০ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলনের ৬ মাসের অস্থায়ী আদেশের কাগজ এনে প্রথম নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি শুরু করে। তখন মন্ত্রী ডাঃ দীপুমনিএমপি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওচমান হাজীর (যিনি এখন চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) প্রভাব খাটিয়ে মেঘনা নদীর হরিনা ফেরিঘাট ও বহরিয়া লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৬ মাসের বালু কাটা তার ৮/১০ বছরেও শেষ হয়নি।পরে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন চর এলাকায় গিয়ে আবার শুরু করে নতুন করে বালু উত্তোলন ও বিক্রি।এভাবেই সে খ্যাতি পায় বালুখেকোর। অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা যায়। সেলিম খান তার এই অপতৎপরতা চালিয়ে নিতে উচ্চ আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যবহার করে। এমনকি চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ থেকে বালু মহালের যে ইজারা দরপত্র আহ্বান করতঃ সেটিও আদালতে মিথ্যা তথ্যে রিট করে সরকারি বালু ইজারা পক্রিয়া বন্ধ করে দেয় এবং নিজে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে দুইহাতে টাকা কামাতে থাকে। তার এত ক্ষমতা নিয়েও চাঁদপুরে আলোচনা রয়েছে। এ ছাড়া চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন।