মেরুদণ্ড ছাড়া যেমন কোনো মানুষ দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোনো জাঁতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। দেশ আজ এই শিক্ষাই প্রায় ধ্বংসের কাঁথগড়ায় দাঁড়িয়ে। যার অন্যতম কারণ হলো এই প্রশ্ন ফাঁস। দেখা যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের আগে শিক্ষাজীবনেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে দুর্নীতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। ফলে দেশে কর্মক্ষেত্রে ক্রমেই বেড়ে চলছে দুর্নীতি। এখন শুধু এসএসসি, এইচএসসিই নয়, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নও অবাধে ফাঁস হচ্ছে। দেখা যায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে। তারা নিত্যনতুন কৌশলের ব্যবহার করে পরীক্ষা শুরুর আগের রাতই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস শুধু এ বছরই হচ্ছে তা নয়, গত প্রায় ৪০ বছর ধরে এ ঘটনা ঘটে আসছে। ১৯৮০ সালে ঢাকা বোর্ডের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রসায়ন বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের কারণে ওই দিনের পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নেয়া হয়েছিল। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০১৭ সালে মাধ্যমিক (এসএসসি) সমমানের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বড় ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালেও এসএসসির প্রশ্ন ফাঁস হয়। পরীক্ষা মনিটরিং কমিটি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা স্বীকারও করে। ২০০১ সাল থেকে পরবর্তী ১৬ বছরে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে ১০ বার। সিআইডি সম্প্রতি ২০২০ সালের প্রশ্ন ফাঁসের একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই ঘটনা জানতে পেরেছে। তারা মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে সাত জনই চিকিৎসক। এর থেকে অনুমান করা যায় যে প্রশ্ন ফাঁস কতটা ভয়ানক রূপ নিয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রধান কারণ হলো এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এই ফাঁসে যারা জড়িত, তারা আর্থিক দিক দিয়ে ব্যাপকভাবে লাভবান হন। অনেক সময় দেখা যায় স্বয়ং মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরাই প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকে এই ঘৃণ্য অপরাধের সাথে। পাবলিক পরীক্ষার (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর চার নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি নূন্যতম তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। অপরাধ অনুযায়ী যা শাস্তি হিসেবে খুবই কম তাই দেখা যায় অপরাধীর শাস্তি ভোগ করে আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাই অবিলম্বে এই শাস্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় প্রশ্ন মূলত ফাঁস হয় ছাপাখানা, প্রশ্ন পরিবহণ এবং বিতরণের মধ্যে যেকোনো একটি পর্যায়ে, তাই বিশেষ করে এসব পর্যায়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। চাহিদা আছে বলেই ফাঁসকারীরা প্রতিবছর প্রশ্ন ফাঁস করে থাকে তাই সবাই সচেতন হলে এই প্রশ্ন ফাঁস থামানো সম্ভব হবে। পরীক্ষা মেধাবী শিক্ষার্থী গঠন ও বাছাইকরণের অন্যতম পন্থা। পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষ সম্মানিত বা অপমানিত হয়। যারা কঠোর পরিশ্রম করে লেখাপড়া করে তারাই ভালো ফলাফল অর্জন করে। তাই অচিরেই সবাইকে সম্মিলিত ভাবে এই প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।