বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় যোগাযোগসেবা হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট-সেবার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম তুলনামূলকভাবে কম হলেও এর মান ও গতির অবস্থা ভালো নয়। তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের এই বিস্ময়কর যুগে ধীরগতির ইন্টারনেট সংযোগের দিক থেকে একেবারে তলানিতে বাংলাদেশের অবস্থান। সরকারি তথ্য অনুযায়ী মোবাইল এবং ব্রডব্যান্ডে বাংলাদেশে বর্তমানে ফোরজি গতির ইন্টারনেট চলমান থাকলেও বাস্তবতার দিক থেকে বিবেচনা করলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় মোবাইলে থ্রিজি ইন্টারনেট-সেবাও ঠিকমত সব স্থানে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে মোবাইলে ফোরজি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক চালু করে তিনটি মোবাইল ফোন অপারেটর। কিন্তু চালু করলেও তা কাক্সিক্ষত গতি প্রদান করতে পারেনি ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই ইন্টারনেট বাফারের সম্মুখীন হয়েছে। ইন্টারনেটের গতি মাপার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওকলার 'স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স' মতে, বিশ্বের মোবাইল নেটের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫ নম্বরে (জুন ২০২১)। বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটে ডাউনলোড স্পিড ১২ দশমিক ৪৮ মেগাবিট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস)। আর আপলোড স্পিড ৭ দশমিক ৯৮ এমবিপিএস। বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে ভেনিজুয়েলা ও আফগানিস্তান। সর্বশেষ অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের ডাউনলোড স্পিড ৭ দশমিক ৩৭ এমবিপিএস। চলতি জুন মাসে বৈশ্বিক গড় ডাউনলোড গতি হচ্ছে ৫৫ দশমিক ৩৪ এমবিপিএস। এদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের তুলনায় ব্রডব্যান্ডে বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি সামান্য বাড়লেও বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। স্পিডটেস্টের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাস শেষে ১৮১টি দেশের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৮তম, যা মে মাসে ছিল ৯৬তম। জুনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ডাউনলোড স্পিড দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ২৭ এমবিপিএস, যা আগের মাসে ছিল ৩৮ দশমিক ১৩ এমবিপিএস। জুনে আপলোড গতিও কিছুটা বেড়ে ৩৭ দশমিক ২২ এমবিপিএসে উঠেছে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হল স্পেকট্রাম বা বেতার তরঙ্গ এবং অপটিক্যাল ফাইবার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দেশে বেতার তরঙ্গের উচ্চ মূল্যের কারণে যথেষ্ট পরিমাণ তরঙ্গ অপারেটরদের হাতে নেই। আবার অপটিক্যাল ফাইবারের অপ্রতুলতার কারণে ফোরজি সেবায় কাক্সিক্ষত মান নিশ্চিত করা সম্ভব কঠিন হচ্ছে। তাই সরকারকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে এখনি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত টেলিকমিউনিকেশন গবেষণার দিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ফান্ডিং বাড়াতে হবে। মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর আরেকটি উপায় হল মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা বাড়ানো। তাই দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোকে টাওয়ারের পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে সেবা ও মান বাড়াতে হবে। অনেক এরিয়া রয়েছে যেখানে এখনও থ্রিজি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়না ওইসব জায়গাগুলোকে অতি দ্রুত চিহ্নিত করে নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রান্তিক পর্যায়ে দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক প্রাপ্তিতে কাজ করছে। সেখানে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবার দুর্ভোগ কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই দেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা এখন সময়ের দাবি।