নিজে খালি পেটে থাকলেও তা নিয়ে কোন ভাবনাই নেই আছির উদ্দীনের। গ্রামের দোকান মালিকদের দুপুরের খাবার কখন পৌছে দিবেন সেই চিন্তায় থাকেন তিনি। রোদ ঝড় বৃষ্টি কোন কিছুতেই থেমে থাকা তার চলে না। কেননা শহরের পৌছানোর পর ব্যবসায়ীদের ঘরে ঘরে টিফিন পট পৌছে দিলেই তাদের পেটে যাবে দুপুরের খাবার। তিনি বিগত ২৪ বছর ধরে অকৃত্রিম সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আছির উদ্দীন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার হেলাই গ্রামের মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে। কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন হেলাই গ্রামবাসি জানান, শহরতলীর তাদের গ্রামটিতে অধিকাংশ পরিবারের মানুষ ছিলেন একসময় তাঁত কাপড়ের ব্যবসায়ী। প্রতিটি বাড়িতে তাঁতের কল থাকায় তাদের নিজেদের তৈরীকৃত কাপড় বাজারে দোকানে নিয়ে বিক্রি করতেন। এখন ও প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ গার্মেন্টস ব্যবসায় জড়িয়ে আছেন। কালীগঞ্জ শহরের কাপড়ের ব্যবসা খানিকটা এ গ্রামের ব্যবসায়ীদের দখলে। তারা সকালে বাড়ি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে আসেন। কেউ কেউ দুপুরের খাবার সকালেই সাথে করে নিয়ে আসে। কেউ কেউ একটু সময় ব্যয় করে বাড়িতে এসে খেয়ে যান। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ব্যস্ততার কারণে দোকান থেকে বের হতে পারে না। তাদের জন্য আছেন আছির উদ্দীন। তিনি বিগত ২ যুগ ধরে গ্রামের দোকান মালিকদের দুপুরের গরম গরম খাবার পৌছে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বিনিময়ে তাদের দেয়া অর্থে চলছে আছির উদ্দীনের ৫ সদস্যের সংসার। আছির উদ্দীন জানান, একসময় বাড়িতে ছিল তাঁতকল, নিজেদের তৈরীকৃত কাপড় বিক্রির মাধ্যমে সংসারে স্বচ্ছলতা ছিল। কিন্তু বেশ আগেই তাঁত শিল্পের জৌলুসতা নষ্ট হয়ে গেছে। বেশিরভাগ তাঁত মালিক ব্যবসার ধরন পাল্টে কালীগঞ্জ বাজারে তৈরী পোশাকের দোকান করেছেন। আমি এ ব্যবসায় জড়িত নেই, ব্যবসায়িরা আমাকে ছাড়েনি,যে কারণে প্রতিদিন তাদের দুপুরের খাবার বহন করতে হয়। প্রায় ২৪ বছর এ ভাবে ব্যবসায়িদের খাবার বহন করছি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের সংসারের কাজ সেরে বেলা ১২ টা বাজার সাথে সাথে ভ্যান নিয়ে বের হয়ে গ্রামের ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গিয়ে খাবার নিয়ে বাজারে যায়। বাড়িতে ঘুরে সকলের টিফিনবক্স নিয়ে ভ্যানের ওপর সাজিয়ে শহরের দিকে রওনা গিয়ে খাবারের টিফিনবক্স দোকান দোকান পৌছে দিই। প্রতিদিন ৫২ জন দোকান মালিকের খাবার পৌছে দিচ্ছি এজন্য আমাকে টাকা দেয়। কেউ একটু বেশি দেন আবার কেউ কম দেয়। বিশিষ্ট কাপড় মোস্তাক আহম্মেদ জানান,তারা কালীগঞ্জ শহরে বাপ দাদার আমল থেকে ব্যবসা করে আসছেন। পাইকারী ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড়ে সারাদিন দোকান থেকে বের হতে পারে না। শহর থেকে বাড়ি ২ কিলোমিটার দুরে। বাড়িতে গিয়ে খাওয়ার সুযোগ হয় না। এজন্য দুপুরের ভাত দোকানে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের গ্রামের আছির উদ্দীনের। এ দায়িত্বশীলতার সাথে প্রায় ২৪/২৫ বছর সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মোশারফ হোসেন কাপড় ব্যবসায়ী জানান, আছির উদ্দীন আমাদের গ্রামের ছেলে। প্রায় ২৪/২৫ বছর ধরে আমাদের দুপুরের খাবার পৌছে দিচ্ছে।