শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে গ্রাম্য বিচারকরা। তবে বিচারে অভিযুক্ত আশরাফুল শ্লীলতাহানি করেন নি বলে দাবি করেছেন। ঘটনার দিন মোবাইল ফোন করে তাঁকে ডাকা হয়েছিল। এরপর তাঁকে ঘরে ভরে বেদম প্রহর করা হয়। পরে ওই রাতে গ্রাম্য বিচার বসিয়ে তাঁকে অন্যায়ভাবে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিচারে ৩০ হাজার জরিমানা দিলেও বাকি ৪০ হাজার টাকা পরে দিবেন বলেন সময় নেন। কিন্তু অসহায় পরিবারটি এই টাকা জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছে। এদিকে আশরাফুলের স্ত্রী বাড়িতে থাকা কিস্তির ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ারসহ ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে আছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাত ৮ টার দিকে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের দোখলাডাইং গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। ওইদিন রাতেই গ্রাম্য বিচার বসে আশরাফুলকে অভিযুক্ত করে জরিমানা করা হয়। ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার শিকার আশরাফুল ইসলাম বলেন একই গ্রামের প্রতিবেশী জেল্টুর বাড়িতে জমিতে কাজ করার সুবাধে চলাফেরা ছিল। ঘটনার দিন কাজ করিয়ে নিবে বলে জেল্টুর স্ত্রী তাজকেরা মোবাইল ফোন করে বাড়িতে ডাকে। তাঁর কথামতে রাত আটটার দিকে সে তাঁদের বাড়িতে যায়। বাড়িতে ঢুকামাত্র বাহির থেকে বাড়ির দড়জা লাগিয়ে দেয়। ওই সময় তাজকেরা বলে তাকে শ্লীলতাহানি করছিল বলে সে দাবি করে। আগে থেকে ওঁৎ থাকা জেল্টু ও তাঁর আত্মীয় জাহাঙ্গীর তাঁকে বেদর মারপিট করে। একপর্যায়ে এলাকার লোকজন ডেকে বিচার করে করে। বিচারের দায়িত্ব ছিলেন গোলাম রাব্বানী নামে এলাকার এক ব্যক্তি। সে নিজেকে বিশাল নেতা মনে করে। ওই এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলেই সে হাজির হয়ে প্রহসন করে। তাঁকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই বিচারে আরো ছিলেন গ্রামের মড়ল, সর্দার ও স্থানীয়রা। আশরাফুল সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন তাজকেরার সঙ্গে ওইদিন কোন শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। তাঁরা আগে থেকে জানতো বাড়িতে কিস্তির ৩০ হাজার টাকা রাখা আছে। ওই টাকা মেয়ে ও জামাইকে গরু কিনে দেওয়ার জন্য রেখেছিলেন। পরিকল্পনা করে আমাকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে বাড়ি থেকে ওই ৩০ হাজার টাকা এনে দেয় তাঁদের। তাঁর স্ত্রী এ ঘটনা শুনে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। এ রকম ঘটনা এর আগে তাজকেরা করেছে বলে তিনি জানান। স্থানীয় অনেকে বলছে তাজকেরা এরকম ঘটনা আগে ঘটিয়ে। তাঁদের এটা একরকম ব্যবসার ফাঁদ। এদিকে ঘটনাটি এলাকায় মুখেমুখে ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকরা ঘটনাটির অনুসন্ধানে ওই গ্রামে যায়। প্রথমে তাজকেরা বাড়িতে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন বাইরে আছি। আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন। এদিকে তাঁর স্বামী জেল্টু মুঠোফোনে বলেন সাংবাদিক কি,তাঁদের কাজ কি,কেন এসেছেন বাজারে আছি বলে কেটে দেন। পরে তাজকেরার বাড়ির প্রতিবেশী নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন ওইদিন আশরাফুলকে মারা হয়েছিল। পরে বিচারে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিচারের দিন ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে বাকি ৪০ হাজার টাকা পরে দিবে বলে সময় নেন। ওই বিচারের দায়িত্বে থাকা গোলাম রাব্বানী বলেন, সাংবাদিকদের খবর দিয়েছে কে? আমরা গ্রাম্যভাবে বিচার করছি। আশরাফুলকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। টাকা নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি রাগান্বিত হয়ে উচ্চভাষায় কথা বলেন। যা খুশি তাই করব। এ বিষয়ে রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান ঘটনাটি আমার জানা নেই। যদি এরকম হয় তাহলে আমার কাছে আশরাফুল অভিযোগ করুক। আমি নায্য বিচার করে দিবো পরিষদে। গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেন নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।