রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রপের মধ্যে গত শুক্রবার সংর্ঘষে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, পুলিশসহ শতাধিক আহতের ঘটনায় কোন পক্ষই মামলা করেনি। এমনকি ১০ পুলিশ আহত হলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। অনেকটা নিশ্চুপ করেছে দুই গ্রপের নেতারা। বর্তমানে মিঠাপুকুরের রাজনৈতিক পরিবেশ রয়েছে অনেকটা শান্ত রয়েছে। তবে হামলার ঘটনায় তৃনমূলের নেতাকর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় কোন গ্রপই মামলা দায়ের করেনি। এদিকে গ্রুপিংয়ের কারণে দির্ঘদিন ধরে মিঠাপুকুরে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান মুখ থুবরে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুযোগটি কাজ লাগানোর চেষ্টা করছে জামায়াত-বিএনপি, সহ অন্য দলগুলো। আগামী জাতীয় নির্বাচনে গ্রুপিংয়ের ব্যাপক প্রভাব পরতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা একে অপরকে ছাড় দিতে নারাজ। দলের তৃনমূল পর্যায়েও বিভেদ-গ্রপিংয়ের প্রভাব পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশির দশক হতে এক সঙ্গে রাজনীতি করেছেন বর্তমান এমপি এইচএন আশিকুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন করকার। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর হতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপি ও তার ছেলে রাশেক রহমান এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। রাজনৈতিক নানা কর্মসুচীতে দু’গ্রপই মুখোমুখি অবস্থান ছিল কঠোরতম। এছাড়াও আওয়ামীগ নেতা মোতাহার হোসেন মওলাও আলাদা ভাবে কমসূচী পালন করছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এইচএন আশিকুর রহমান এমপি। এখন জাকির হোসেন সরকার, রাশেক রহমান ও মোতাহার হোসেন নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে জাকির হোসেন সরকার এগিয়ে রয়েছেন। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে মিঠাপুকুর আওয়ামী লীগে। এক গ্রপ আরেক গ্রপ চরম প্রতিপক্ষ হিসেবে দার করিয়েছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এর প্রতিফলন ঘটেছে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের মধ্যে গ্রপিংয়ের কারণে মাত্র ৩ টিতে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। হামলা-মামলায় দীর্ঘদিন পালিয়ে বেরানো জামায়াতের চেয়ারম্যান হয়েছে ৭টি ও ২টি ইউনিয়নে হয়েছে বিএনপি। বাকিগুলো হয়েছে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। তৃনমূলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ত্রিমুখী গ্রুপিংয়ের কারণে বিভক্তি দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে। স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের এক গ্রুপের শত্রু হচ্ছে আরেক গ্রুপ। বিরোধীদলের প্রতিপক্ষের চেয়েও অনেক বেশি শক্রু একে অপরের। এই সুযোগে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে জামায়াত, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সুবিধাভোগী নেতাকর্মীরা। তারা আওয়ামী লীগের পদ-পদবিতেও রয়েছে। দলের ক্ষতি করছে। সুবিধাও নিচ্ছে। গ্রপিংয়ের কারণে ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিতরা নিষ্কিয় হয়ে পড়েছেন। অনেকেই পদ-পদবী এবং দলীয় কার্যক্রমে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন না। আওয়ামী লীগের তৃনমূলের কর্মী আবদুর রাজ্জাকও রেজাউল করিম বলেন, গ্রপিংয়ের কারণে আমরা অসহায়। এক পক্ষে কাছে গেলে আরেক পক্ষ শক্রু ভাবে। একারণে চুপচাপ আছি। আমরা নেত্রীকে ভাল বেসে আওয়ামী লীগ করি। মিঠাপুকুরে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি বন্ধের অনুরোধ জানান তারা। মিঠাপুকুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার জানিয়েছেন, আমি ৩৭ বছর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমার প্রতিটি সভা-সমাবেশে হাজার-হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের অনুষ্ঠানে ২শত থেকে ৩শত লোকও হয় না। মিঠাপুকুর উপজেলায় আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে তাদের হিংসা হচ্ছে। হিংসা থেকেই বারবার আমার ও আমার লোকজনের উপর হামলা করা হচ্ছে। নানা ধরণের চক্রান্ত করা হচ্ছে। তবে সাধারণ জনগণ ও দলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছে। এদিকে অপর গ্রপের স্থানীয় এমপি এইচএন আশিকুর রহমান ও তার ছেলে রাশেক রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি। এমপি গ্রপের অন্যতম নেতা হিসাবে পরিচিত মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগে কোন গ্র“পিং নেই। যারা আলাদা ভাবে কর্মসূচি পালন করছেন, তারা নিজেদের স্বার্থে করছেন। এমপি-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। আমরা মুল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন আশিকুর রহমান ও রাশেক রহমানের পক্ষ রয়েছি। এমপি'র সমর্থক ও চেংমারী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম টুটুল বলেন, এমপি স্যার ও তার ছেলে দেশের বাইরে রয়েছেন তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ হল রুমে আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠান করছিলাম ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসছিল। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজনের সাথে সামান্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত শুক্রবারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি।