ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ জহুরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গ্রামের ধানক্ষেতের সরু আইলই সেখানে যাতায়াতের একমাত্র পথ। এতে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালে বাকুলিয়া গ্রামের বিলের মধ্যে জহুরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বর্তমানে সব শ্রেনী মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৬ জন। বিদ্যালয়ের তিন পাশেই ধানক্ষেত। আরেক পাশে রয়েছে ঢাকা খুলনা মহাসড়ক। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে শিশুদের যাতায়াতের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনো রাস্তা তৈরি হয়নি। ফলে তাদের যাতায়াতের জন্য শ্রেনী প্রধান সড়ক একপি ডোবার উপরে কাঠের ও বাঁশ দিয়ে চলাচল করছে। কালীগঞ্জ পৌরসভার২ নং ওয়ার্ড বাকুলিয়া গ্রামের বিলের মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জহুরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই। রাস্তা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে চায় না। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থরি মা বলেন, রাস্তা না থাকায় বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না। বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি, কখন যে কাঠের উপর থেকে পড়ে যায়।এ জন্য মাঝে মধ্যে স্কুলে গিয়ে বাচ্চার জন্য বসে থাকতে হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন খান বলেন, রাস্তা না থাকায় অনেক ভোগান্তি হয়। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে চায় না। অভিভাবকরা বাচ্চাদের দিতে চান না। বর্ষা মৌসুমে আরো বেশি সমস্যা হয়। জমির আইল দিয়ে আসতে গিয়ে বইখাতা ভিজে যাওয়ারও ঘটনাও ঘটছে। শুরুর দিকে প্রায় ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। এখন সব শ্রেনী মিলিয়ে পড়ে ৭৬ জন। রাস্তা না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নও হচ্ছে না। দুর্ভোগের কথা বারবার জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ কারণে দিন দিন ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের পড়-য়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেঠো পথ ধরে দুইটি কাঠের ভাঙা ছোট কাঠ ও বাঁশ দিয়ে চলাচলের রাস্তার উপর দিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করতে হয় বছরের পর বছর।বিদ্যালয়টি বাকুলিয়া/ শ্রীরামপুর সড়ক থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে বিলের মধ্যে অবস্থিত। প্রাক প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত মোট ৭৬ জন শিক্ষার্থী এখানে নিয়মিত পাঠ গ্রহন করছে। এ বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক কর্মরাত থেকে পাঠদান করাচ্ছেন।বিলের মধ্যে ২০১৬ সালে ৩৩ শতাংশ জমির উপর ৩ টি শ্রেনী কক্ষ ও ১ টি অফিস কক্ষের ১ তলা ভবন নির্মীত হলেও আজ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার জন্য কোন রাস্তা নির্মাণ হয়নি। বছর জুড়ে স্কুলের চতুর পাশের জমিতে পানি জমে থাকে।বর্ষা মৌসুমে পানির পরিমাণ বেশি হলে স্কুলটি যাতে পানিতে ডুবে না যায়, সেই জন্য জমে থাকা পানি বের করার স্বার্থে দুইটি ছোট ছোট কাঠের পাটাতন তৈরি করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে। এই দুইটি কাঠের পাটাতন ও উঁচু-নিচু গর্তে ভরা মেঠো রাস্তায় স্কুলটিতে যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন। এই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী সজিব হাসানের মা বিথী বেগম বলেন, এখানে স্কুল করেছে কিন্তু রাস্তা করবে কবে ? এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। আমার ছেলে একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়েছিল। আমিও একদিন স্কুলে ছেলের টিফিন দিতে গিয়ে পড়ে যায়। বর্ষাকালে এ ধরনের সমস্যা আরো বেশি হয়।চতুর্থ শ্রেনীর রিপন মিয়া ও তৃতীয় শ্রেনীর সুমাইয়া খাতুনের সাথে কথা হলে তারা জানায়,এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়।অনেকে কাঠের এই সেতু দিয়ে পার হওয়ার সময় পানিতে পড়ে যায়।আবার আমাদের স্কুল মাঠে পানি কাদা থাকায় আমরা ভালোভাবে খেলতেও পারি না। জহুরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন খান বলেন, শুনেছি বাকুলিয়া টু শ্রীরামপুর সড়ক সংলগ্ন জমিতে একটি কলেজ হওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে স্কুলের রাস্তা নির্মানের জন্য জমি নির্ধারনের জটিলতা রয়েছে বিধায় রাস্তার কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফাতেমা খাতুন জানান,বিদ্যালয়টির রাস্তা করার জন্য নিজেস্ব জমি নেয়। সামনে একটি কলেজ হওয়ার কথা। সেটি হলে তখন দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাস্তা করা হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্ত মাহমুদুল হাসান জানান, বিদ্যালয়টির রাস্তার অভাবে সৃষ্ট দূর্ভোগ স্বচোখে দেখেছি। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় রাস্তার ব্যাপারে কথা বললে সেখানে উপস্থিত থাকা স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নোট করে নেন এবং দ্রুত রাস্তাটি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুত ব্যাক্ত করেন।