আমেরিকা প্রবাসীদের সংগঠন ‘লালন’ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে মারধরের ঘটনায় আলোচিত চারণকবি রাধপদ রায়কে দেড় লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন কবির পরিবারের উপস্থিতিতে তার হাতে ১লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। হয়ে কবি নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কবির বড় ছেলের কাছে মাত্র ৫০০ টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মারধরের শিকার হন কবি। গত কয়েকদিন ধরে ৮০ বছরের আহত এই বৃদ্ধ কবির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় তাকে নিয়ে দেশ বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। মানুষকে গান-কবিতা শুনিয়ে পাওয়া সামান্য অর্থ দিয়ে সংসার চালানো কবির অসহায়ত্ব নিয়ে বিবেক তাড়িত হয়ে আমেরিকা প্রবাসীদের সংগঠন লালন কবিকে এই আর্থিক সহয়তা দেয়। অর্থ সহায়তা পেয়ে কবি রাধাপদ রায় বলেন, সুদূর আমেরিকা থেকে যারা আমাকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করলো ভগবান তাদের দীর্ঘজীবী করুক। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সকালে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের গোড্ডারপাড় এলাকায় কবি রাধাপদ রায়ের নিজ গ্রামে এ হামলার ঘটনাটি ঘটে। ওইদিন চিকিৎসার জন্য কবিকে নেয়া হয় নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ ঘটনায় রাধাপদ রায়ের ছেলে শ্রী জুগল রায় পরদিন রোববার অভিযুক্ত দুই সহধরের বিরুদ্ধে নাগেশ্বরী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে গত বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে প্রদান আসামি রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কবির উপরে হামলার ঘটনাটি একান্তই পারিবারিক হলেও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের পায়তারা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক মোঃ সাঈদুল আরিফসহ ধর্মীয় এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কবিকে দেখতে যান। তারা কবির সাথে কথা বলে মারধরের ঘটনাটি পারিবারিক দ্বন্দ্বের বিষয় বলে নিশ্চিত হন। এ বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার না চালানোর জন্য সবাইকে জানানো হয়। এমনকি কেউ অপপ্রচার চালালে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানানো হয়। রাধাপদ রায় জীবনে বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেননি। পড়েছেন মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। নিজের লেখা গান ও কবিতা মানুষকে শুনিয়ে সামান্য উপার্জনে চলে তার সংসার। আঞ্চলিক ভাষায় তার লেখা গান ও কবিতাগুলো বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে তার লেখা কবিতা "কেয়ামতের আলামত জানি কিন্তু মানি না"। শিরোনামে কবিতাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাধাপদ সরকারের নিজের লেখা আঞ্চলিক ভাষায় ৩ শতাধিক গান ও কবিতা রয়েছে।