দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠছে সংসদীয় আসন ১০৪, খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) রাজনৈতিক অঙ্গন। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করায় আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকন্ডকে পুঁজি করে আ.লীগ চায় খুলনা-৬ সহ খুলনার ছয়টি আসনই পূণরায় নিজেদের দখলে রাখতে। এদিকে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মধ্যে দিয়েও পৃথক পৃথক কর্মসূচি সফল করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে রয়েছে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সহ খুলনার ৬টি আসনেই জয়লাভ করে তাদের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চায়। অন্যদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে খুলনা বিভাগের ৩৬ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া এখনো পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে নামতে পারেনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে ব্যাতিক্রম কোন দলের হয়ে নির্বাচন করবেন জানান না দিলেও এলাকার সন্তান তরুণ আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ দ্বাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে পুরোদমে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসন ও খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার দুটিসহ জেলার ৬টি আসনই রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। অথচ একদিকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অন্যদিকে দলে নতুন আসা নেতাকর্মীদের ভিড়ে দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মীরা রাজনৈতিক মাঠ ছেড়ে নীরবে ঘরে উঠেছে। দলীয় এমপি আর মন্ত্রীদের কাছে নতুন নতুন মুখ আশ্রয় পাওয়ায় চরম বিতর্কের মুখে পড়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এই দলটি। খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের আইলা বিধ্বস্ত কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পাইকগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। ভোটের আগে মাঠের লড়াইয়ে দলীয় পর্যায়ে লবিংয়ের পাশাপাশি নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছেন। আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর পাশাপাশি সরকার দলীয় অন্তত ১২জন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়মিত মাঠে গণসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন জাতীয় দিবস, উৎসব ও দলীয় কর্মসূচীতে নিজেদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা ও ব্যানার-পোষ্টারের মাধ্যমে নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে অনেকে পৃথক কর্মসূচীতে নিজেদের পরিচিতি ও প্রত্যাশার বিষয়গুলিকে জানান দিলেও অনেকে বর্তমান সাংসদের সাথে একই মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। তবে কে হচ্ছেন সুন্দরবন উপকূলীয় জনগুরুত্বপূর্ণ আসনটি থেকে নৌকার প্রার্থী? বর্তমান সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর উপর আস্থা রেখে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে? নাকি দশম ও একাদশ নির্বাচনের পূণরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে আসনটিতে? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের অ্যাড. স ম বাবর আলী এ আসনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির অ্যাড. শেখ রাজ্জাক আলী, আশির দশকে জাতীয় পার্টি থেকে অ্যাড. মোমিন উদ্দীন আহমেদ ও সরদার জহুরুল হক, ১৯৯১ সালে জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ্ মুহাম্মাদ রুহুল কুদ্দুস, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক জয়লাভ করেন। ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোট প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ শাহ্ মুহাম্মাদ রুহুল কুদ্দুস এই আসনে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের অ্যাড. সোহরাব আলী সানা। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আক্তারুজ্জামান বাবু জয়লাভ করেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বর্তমান এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মসিউর রহমান, সাবেক এমপি সোহরাব আলী সানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রেম কুমার মন্ডল, সাবেক এমপি মরহুম শেখ মো. নুরুল হকের পুত্র জেলা শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলাম রাসেল, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোহাঃ শেখ শহীদ উল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ মনিরুল হক, পাইকগাছা উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, কয়রা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি জিএম মোহসিন রেজা, কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এসএম শফিকুর ইসলাম, কয়রা উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৯-৯৫) ইউনুস সানার ছেলে উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম সাইফুল্লাহ আল মামুন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে ছিল শ্বাসরুদ্ধকর চমক। নবম নির্বাচনে দলীয় টিকিটে নির্বাচিত হয়েও দশম নির্বাচনে প্রার্থীতা ধরে রাখতে পারেননি বর্তমানে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. সোহরাব আলী সানা। পরের বার দশম নির্বাচনে সতীর্থ প্রয়াত অ্যাড. শেখ মো. নূরুল হক এর কাছে প্রার্থীতা হারান তিনি। একইভাবে নৌকায় চড়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও একাদশ নির্বাচনে দল আর তার উপর ভরসা রাখতে পারেনি। একাদশ নির্বাচনে হেভিওয়েটদের ভীঁড়ে শেষ মূহুর্তে দলীয় টিকিট পান বর্তমান সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু। তবে এবারো কি তার পূণরাবৃত্তি ঘটবে আসনটিতে? নাকি আক্তারুজ্জামান বাবুতেই তৃপ্ত আওয়ামী লীগ ফের তার উপরই ভরসা রাখবেন? যদিও তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে তফশীল পরবর্তী দলীয় প্রার্থী বাছাই পর্যন্ত। যদিও সর্বশেষ দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ চাইছে প্রার্থী পরিবর্তন। আর তাদের চাওয়ার উপরানা বুঝে পেতে অন্তত এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী এই মূহুর্তে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান জানান দিয়ে এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের নের্তৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি তৃণমূলের সাধারণ নেতা-কর্মী ও ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। পরিবর্তনে বিশ্বাসী অংশের দাবি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা পাইকগাছা-কয়রার সন্তানদের যে কাউকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। স্থানীয় সরকার পরিষদের দলীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকেই মনোনয়ন চাইছেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে দলীয় স্বার্থে তারা পক্ষেই কাজ করবেন। সেক্ষেত্রে স্থানীয়দের মধ্যে এলাকার প্রতি আকর্ষণ-ভালবাসা কাজ করার মানষিকতা বেশি থাকে। তবে আওয়ামী লীগ দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) এ প্রার্থী হিসেবে সেরা কে বেছে নিবেন এমনটা প্রত্যাশা সাধারন মানুষের।