বর্তমানে বিশ্বের ১৭৬ টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মরত। এতে দেশের বেকার সমস্যার কিছু সমাধান হলেও দেশের সৃষ্টিশীল অনেক মেধাবী তরুণ তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেশের জন্য কাজে লাগাতে পারছেন না। বিশ্বের অনেক দেশেই এ দেশের তরুণরা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। ফলে দেশের মেধা পাঁচারের ব্যাপারটি আলোচিত হচ্ছে। গত ৫ জুলাই সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘মেধাবী, দক্ষ ও উদ্ভাবনী প্রতিভা সাধারণত কাক্সিক্ষত সুযোগ-সুবিধা, অবকাঠামোগত পরিবেশের অভাবে ভিন দেশে স্থানান্তরিত হয়। ফলে দেশের অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান পরিবেশ; বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা, লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ ও নাগরিকত্ব সহ স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ হলো মেধা পাঁচারের অন্যতম কারণ। সরকার এ বিষয়ে সচেতন এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মেধা পাঁচার রোধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের কারণে মেধাবীরা দেশেই এখন কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। তাছাড়া সব সেক্টরে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের মেধা পাঁচারের অনেকটাই রোধ হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য অনেকটাই সঠিক হলেও এটা সত্য যে দেশে অসংখ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলেও সেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেত্তয়া সম্ভব হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যতোটা বাণিজ্যিক, ততোটা গবেষণা আগ্রহী নয়। শুধু তাই নয় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের কর্মজীবন শুরু করার সময় যথাযথ পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে বিশ্বের আলো-ঝলমল বিভিন্ন দেশে তারা পাড়ি জমিয়ে তারা নিজেদের মেধা বিক্রি করছেন। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বা অগ্রগতিতে তিনি তার যথাযথ অবদান রাখতে পারছেন না। নতুন নতুন ব্যবসা বাণিজ্য বা শিল্প কারখানা স্থাপনের ফলে দেশে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হলেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী অনেকের পক্ষেই যথাযথ কর্মসংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। আর হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে কর্ম-বিমুখ হয়ে দেশের বোঝায় পরিণত হচ্ছে। এটা সত্য যে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি ও দ্রুততম ইন্টারনেট সংযোগের ফলে পুরো-বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। তারা তাদের ইচ্ছে মতো বিশ্বের যে কোনো জায়গায় যোগাযোগ করে কর্মসংস্থান করতে পারছে বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ঘরে বসেই আয় করতে পারছেন। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে নিজ অবদান রাখতে পারছেন ঘরে বসেই। কাজেই মেধা পাঁচার রোধে দেশে ব্যাপক হারে যথাযথ পারিশ্রমিকের কর্মসংস্থান করতে হবে। আর তা না হলে এসব তরুণ ভিন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে দেশের মায়া ত্যাগ করবেন। সেটা নিশ্চয়ই আমরা চাই না।