কিশোরগঞ্জে গত ৩ দিনের টানা ভারি বর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে রোপা আমন, শাক সবজি ও মাছের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় ১৩ হাজার ৭৮৫ হেক্টর রোপা আমন ধানের জমি ও ৫৬৯ হেক্টর সবজির জমি, ১৪৬ হেক্টর মাসকলাই ও ৩০ হেক্টর পানের জমি তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। রোববার (৮ অক্টোবর) কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে জেলায় ৩ হাজার ৪ শ ১জন চাষির ৬ হাজার ৬ শত ৪১ টি পুকুর, ৮০৮ হেক্টর জলায়তনে ৪ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৫ শ টাকার মাছের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা মৎস্য দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও জেলা তথ্য কর্মকর্তা নার্গিস সুলতানা জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জ জেলায় ৮৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির চাষ হয়েছে ২ হাজার ৪১২ হেক্টর জমিতে, মাস কলাই চাষ হয়েছে ৫৩৩ হেক্টর জমিতে,পান চাষ হয়েছে ৭০ হেক্টর জমিতে। গত ৩ দিনের টানা ভারি বর্ষণে জেলায় ১৩ হাজার ৭৮৫ হেক্টর রোপা আমন ধানের জমি ও ৫৬৯ হেক্টর সবজির জমি, ১৪৬ হেক্টর মাসকলাই ও ৩০ হেক্টর পানের জমি তলিয়ে গেছে। সবজি বেশি তলিয়ে গিয়েছে জেলার পাকুন্দিয়া, বাজিতপুর, হোসেনপুর উপজেলায়।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, আমার ১ একর ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া ভাস্করখিলা বিলের জমি পানির নিচে চলে গেছে। ধানের জমি তলিয়ে গিয়ে রাস্তার ওপর দিয়ে প্লাবিত হচ্ছে। নীলগঞ্জ-তাড়াইল সড়কের উপর দিয়েও পানি বিলে প্রবাহিত হচ্ছে। যদি পানি দ্রুত চলে যায় তাহলে হয়তো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। না হলে সব চলে যাবে।
জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার পোড়া বাড়িয়া গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম জানান, আমাদের বাড়ির সামনের ও পেছনের প্রায় ৫০০ একর ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। আর বৃষ্টি না হলেও পানি নেমে গেলে হয়তো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। পানি জমিতে জমে থাকলে সব ধান গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। এতে আমিসহ আমাদের এলাকার সব কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৎস্য খামারী মো: মনসুর আলী বলেন, আমার প্রায় শতাধিক পুকুর তলিয়ে ৫৪ লাখ মাছের পোনা ও বড় মাছ ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে আমার ২ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মোজাম্মেল হক বলেন, কিশোরগঞ্জ সদরের প্রায় ২০০ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নার্গিস সুলতানা জানান, বন্যায় কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলার মাছের খামারিদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অতি বৃষ্টির পানির ঢেউয়ে ভেঙে গেছে মাছের খামারের পাড় ও অবকাঠামো। জেলায় ৩ হাজার ৪ শ ১জন চাষি, ৬ হাজার ৬ শত ৪১ টি পুকুর, ৮০৮ হেক্টর জলায়তনের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেসে গেছে ১৮৩৫.৫০ মে.টন মাছ। জেলায় প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে ৪ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৫ শ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার জানান, গত ৫ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ভারি বর্ষণে জেলায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জমিতে জমা পানি যদি ২ থেকে ৩ দিন জমা থাকে তাহলে রোপা আমন ধান ও সবজি জমির ক্ষয়ক্ষতি হবে। আর যদি বৃষ্টি না হয় এবং পানি নেমে যায় তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করছি। পরে যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। বরাদ্দ এলে উপজেলা কমিটির মাধ্যমে চাষিদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন।