লালমনিরহাটে পঞ্চম দফা বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলেও তিস্তার তীরবর্তী বাসিন্দাদের দূর্ভোগ কমেনি। বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। এরইমধ্যে কয়েকদফা তিস্তার ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমিসহ প্রায় শতাধিক বসতভিটা। নষ্ট হয়েছে আগাম সবজিসহ আমনের ক্ষেত। নদী ভাঙ্গনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া এ অঞ্চলের মানুষের দিন কাটছে চরম হতাশায়।
রোববার (৮ অক্টোবর) জেলার হাতিবান্ধায় অবস্থিত ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১.৬৫ মিটার যা বিপদসীমা ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত। এর আগে গত বুধবার (৪ অক্টোবর) একই পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.৪০ মিটার। যা বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে
টানা বর্ষন ও ভারতের সিকিমের একটি বাঁধ ভেঙে আসা পানিতে তিস্তায় সৃষ্ট স্বল্প মেয়াদী বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলেও দূর্ভোগ কমেনি। পানিতে ভেসে আসা পলিতে নষ্ট হয়েছে কৃষকের ফসল। পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় আবারো লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর, বাগডোরা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, চন্ডিমারীসহ তিস্তা নদীর ৬টি পয়েন্টে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। এরইমধ্যে এসব এলাকার বসতভিটা, ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা বিলীন হতে শুরু হয়েছে।
রোববার (৮ অক্টোবর) বিকেলে ডেইলি বাংলাদেশের এ প্রতিনিধি তিস্তা পাড়ে সরজমিনে গেলে দেখতে পান, বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব মানুষেরা ঠাই নিচ্ছেন উঁচু রাস্তা বা অন্যের জমিতে। ভাঙ্গন কবলিতদের অভিযোগ নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে হয় তাদের।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুরের বাসিন্দা সহিদার রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমার বাড়ি গতকাল রাতে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিজস্ব সম্পদ বলতে বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। সেটুকুও হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। পরিবারকে নিয়ে কোথায় যাবো কুল কিনারা খুঁজে পাঁচ্ছি না। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দোষারোপ করে বলেন, কর্তারা এসে দেখে যায়। মাঝে মধ্যে কিছু বালুর বস্তা ফেলে যায় কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।
একই এলাকার বাসিন্দা লঙ্কেস্বর রায় ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এবারের হঠাৎ বন্যার পানি হঠাতই নেমে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পরপরই শুরু হ'য়েছে ভাঙ্গন। এ ছাড়া বন্যার পানিতে ভেসে আসা পলিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নদী পারের কৃষকরা হতাশায় ভুগছে। এ যেন মরার উপর খরার ঘা
পার্শ্ববর্তী গ্রামের নদী তীরবর্তী বাসিন্দা জোবাইদা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, নদী ভাঙ্গনে জমি হারিয়েছেন এবার বসতভিটাও বিলীন হয়ে গেলো। বর্তমানে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে আছেন।
রাজপুরের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নুরুল আমিন ঘাটাইল ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, কয়েক দফা বন্যায় শুধু রাজপুরের ৬০-৭০ টি বাড়ি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ায় আবারও নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হ'য়েছে। নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে সাময়িক ব্যবস্থা না নিয়ে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি তার।
একই রকম মন্তব্য করেন খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরা, চন্ডিমারীসহ আদিতমারী উপজেলার নদী ভাঙ্গন এলাকার বাসিন্দারা।
‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট জেলা সভাপতি গেরিলা লিডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, তিস্তার গর্ভে পলি পরায় পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে প্রায়ই অল্প পানিতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার শুরু হচ্ছে তীব্র ভাঙ্গন। এতে প্রতিবছর ভূমিহীন ও গৃহহীনের সংখ্যা বাড়ছে। নদী ভাঙ্গন ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনতে দ্রুতই স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান তিনি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বর্তমানে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকা রাজপুর, বাগডোরা, চন্ডিমারী, মহিষখোচাসহ বেশকিছু পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা আপদকালীন কাজ হিসেবে এসব পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।