ইসরায়েল ভূখণ্ডে গত শনিবার যে হামলা চালায় হামাস, তার জন্য দুই বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনটি। আর এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গড়ে তুলেছে অস্ত্র, গোলাবরুদ তৈরির কারখানা।
ওই হামলার পর একদিন পর লেবাননে হামাসের একজন শীর্ষ নেতা আরটিঅ্যারাবিক নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য দিয়েছেন।
“আমরা প্রচুর (গোলাবারুদ) তৈরি করেছি, স্থানীয়ভাবে আমাদের সবকিছুর কারখানাই আছে,”সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন হামাসের বিদেশ বিষয়ক প্রধান আলী বারাকা।
তিনি জানান, এসব কারখানায় ১০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পাল্লার রকেট ছাড়াও মর্টার এবং মর্টার শেলও তৈরি করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রও তৈরি হচ্ছে কারখানাগুলোতে।
গত শনিবার ভোরে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট ছুঁড়ে ইসরায়েলকে হতবিহ্বল করে দিয়েছিল হামাস। এ ছাড়া প্যারাগ্লাইডারে আকাশপথে ও সীমান্ত ডিঙিয়ে মোটর সাইকেলে করে ইসরায়েলে ঢুকে সাঁড়াশি হামলা চালায় হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা।
এরপর থেকেই আলোচনায় ছিল, ইসরায়েলের মতো বিপুল সামরিক শক্তিধর একটি দেশের কড়া নজরদারি এড়িয়ে কীভাবে এতটা পরিকল্পিত হামলা চালায় হামাস। এত অস্ত্র, গোলাবারুদই বা পেল কোথায় সংগঠনটি, তা নিয়েও নিয়েওে ছিল জল্পনা।
হামাসের এই হামলায় ইরানের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও সামনে চলে আসে। যদিও ইরান এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
হামাস নেতা আলী বারাকা বলেন, “আমাদের কালাশনিকভ রাইফেল ও এর বুলেট তৈরির কারখানা আছে। রাশিয়ার অনুমোদন নিয়েই আমরা এসব বুলেট তৈরি করছি। গাজাতেই আমরা এসব তৈরি করছি।“
“যুদ্ধের কৌশল হিসেবে গোপনীয়তা রক্ষার কারণে আমাদের অন্য দলগুলো, এমনকি আমাদের মিত্ররাও হামলার সময় সম্পর্কে জানত না,” ভাষ্য তার।
তিনি আরও বলেন, “হামলার আধাঘণ্টা পর আমাদের মিত্র হেজবুল্লাহ, ইরান এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তুরস্ককেও জানানো হয়।”
তবে বারাকা এই হামলা পরিকল্পনায় বাইরের কোনো সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।“মিত্ররা আমাদেরকে শুধু অস্ত্র অর্থ দিয়ে সহায়তা করে। প্রথম সবার আগে রয়েছে ইরান, তারা আমাদেরকে অস্ত্র ও অর্থ দেয়; হেজবুল্লাহও আছে।”
ইসরায়েলে হামলার পর রাশিয়াও খোঁজখবর নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা আমাদের সবশেষ তথ্য ও লড়াইয়ের লক্ষ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।”
ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিভ্রান্তিতে পড়ে যাওয়ায় রাশিয়া খুশি বলেও জানান আলী বারাকা।
“এমনকি আমাদের প্রতি রাশিয়ার সহানুভূতিও আছে। রাশিয়া আমাদেরকে (শনিবার) বার্তাও পাঠিয়েছে, যেখানে ছিল সহানুভূতি। ফিলিস্তিনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ায় তারা খুশি। ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ওপর থেকে চাপ কমিয়েছে এটা (ইসরায়েলে হামলা)। এক যুদ্ধ আরেক যুদ্ধকে সহজ করে দিয়েছে। রণক্ষেত্রে আমরা একা নই।”
হামাসের অনেক লক্ষ্যের একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি।
আলী বারাকা বলেন, “আমাদের অনেক সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবজ্জীবন কারাভোগ করছে। আমরা তাদেরকে মুক্ত করে দিতে বলেছি। তারা বন্দি বিনিময় করে, সম্প্রতি ইরানের সাথেও করেছে। তাহলে আমার সাথে করছে না কেন?”
লেবাননে ফিলিস্তিনি উপদলগুলো সাধারণ গাজা ও পশ্চিম তীরে তাদের সহযোগীদের সঙ্গে ষক্ত যোগাযোগ করতে পারে না, ভ্রমণে কড়াকড়ি থাকায়। তাছাড়া লেবানেনর এই ফিলিস্তিনিদের একটা বড় অংশ কখনই মূল ভূখণ্ডে কখনই যাননি।