ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) নবাগত ছাত্রদের র্যাগিং নিয়ে আপত্তি করায় ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের দশম ব্যাচের এক ছাত্রকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে অষ্টম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের দুই ছাত্র। ববি’র বঙ্গবন্ধু হলের চতুর্থ তলায় এ হামলার ঘটনার তিনদিন পর রোববার রাতে তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে ববি প্রশাসন। তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে হামলায় গুরুত্বর আহত হয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র মুকুল আহমেদ সোমবার সকালে জানিয়েছেন, চিকিৎসকেরা তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। আহত মুকুল আহমেদ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বরকান্দা গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের ছেলে। হামলার সাথে জড়িত তানজিদ মঞ্জু ও সিহাব উদ্দিন অষ্টম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট আরিফ হোসেন বলেন, মুকুল আহমেদ হলের ৫০২০ নম্বর কক্ষে থাকে। র্যাগিংয়ের বিষয় নিয়ে সে আপত্তি করায় বৃহস্পতিবার রাতে তাকে (মুকুল) ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে রোববার বিকেলে মুকুল ববি প্রশাসন বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র মুকুল আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আমি জানতে পারি আমাদের একাদশ ব্যাচের ছোট ভাইদের বঙ্গবন্ধু হলের একটি কক্ষে ডাকা হয়েছে। এনিয়ে আমাদের ব্যাচের ফেসবুক মেসেঞ্জার ডিসকাশন গ্রুপে আমি আপত্তি জানাই। আমি ওই গ্রুপে লেখি “ব্যাচের নামে ছোট ভাইদের ডাকা হয়েছে, অথচ আমরা জানিনা। আগেও এভাবে ডেকে র্যাগিং করা হয়েছে অনেককে। তখন বিভাগের শিক্ষকদের কাছে আমাদের কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। এখন আবার ডাকা হয়েছে, এটা বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই না”। মুকুল আরও বলেন, লেখার কিছুক্ষণ পর আমাদের ব্যাচের তানজিদ মঞ্জু ও শিহাব উদ্দিন আমাকে মোবাইল ফোনে কল করে শেরে বাংলা হলে যেতে বলে। ওইদিন রাত আটটার দিকে বঙ্গবন্ধু হলের পাঁচতলা থেকে নিচে নামতে গিয়ে চতুর্থ তলায় তানজিদ ও শিহাবের সাথে দেখা হয়। ওইসময় তারা আমাকে ধরে চতুর্থ তলার ৪০১৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে আটকে ফেলে। কক্ষের অন্যান্যের বের করে দিয়ে তারা আমার কাছে জানতে চায়, মেসেঞ্জারে কেন এসব লিখেছি। আমার জন্য তারা একাদশ ব্যাচটি গোছাতে পারছে না। বলেই আমাকে প্রচন্ড মারধর করা হয়। জিআই পাইপ আর ভাঙা কাঠের চেয়ারের হাতল দিয়ে পিটিয়ে আমার বাম হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুকুল আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে এসেছি মা ও বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। কিন্তু এখানে এসে এখন পঙ্গু হতে চলেছি। চিকিৎসকেরা দ্রুত আমাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। মুকুল আরও বলেন, এখানে মামলা করে কোনো বিচার পাওয়া যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, নির্যাতনের শিকার ছাত্র মুকুল তার ওপর হামলাকারী মঞ্জু ও শিহাবের নামোল্লেক করে অভিযোগ দায়ের করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. নাজমুল কায়েসকে। অপর দুই সদস্য হচ্ছেন-পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ড. মো. মাহফুজ আলম এবং অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রিফাত ফেরদৌস। প্রক্টর আরও বলেন, তদন্ত কমিটিকে সোমবার (১৬ অক্টোবর) থেকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল এবং অভিযুক্ত দুই ছাত্রকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মুকুলের চিকিৎসার জন্য নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অভিযুক্ত তানজিদ মঞ্জু ও সিহাব উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিফ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ববি’র একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি শেরেবাংলা হলে রাতের আঁধারে হামলা চালিয়ে আয়াত নামের এক ছাত্রের রগ কেটে দেয়ার নেতৃত্বে ছিলেন মঞ্জু ও শিহাব। তারা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করলেও ববিতে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। ববি ছাত্র আয়াতের পর মুকুলের ওপর নৃশংস হামলায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এর আগের ঘটনাগুলো প্রশাসন বিচার করলে মুকুল ও আয়াতকে পঙ্গু হতে হতোনা। এসব ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত রয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকেই দায়ী করেছেন। এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট আরিফ হোসেন বলেন, এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। যেকক্ষে মুকুলকে নির্যাতন করা হয়েছে সেটি রোববার রাতে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। তবে আয়াতের ঘটনায় সে মারামারির মধ্যে পরে হামলার শিকার হয়েছিলো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।