বাংলাদেশের রাস্তায় যে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলে, সেটি স্বীকার করে নিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। মঙ্গলবার বিআরটিএ ভবনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৩ উদযাপন সম্পর্কিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তায় বড় সংকট এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি। বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, দেশে বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। যদিও এরমধ্যে ৩০ শতাংশ রাস্তায় চলে না। ফিটনেসবিহীন গাড়িও আছে। নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, এবার সপ্তমবারের মতো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন করা হবে। সামাজিক আন্দোলন ছাড়া সড়কের সংকট পরিবর্তন হবে না। এজন্য ব্যাপকভাবে মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ‘সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে’ সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যেরও জবাব দেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমরা এখন দুর্ঘটনার তথ্য নিজেরাই ওয়েবসাইটে দিচ্ছি। বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যে গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। এখন আমরা বছরখানেক ধরে রিয়েল ডাটা কালেকশন করছি। এজন্য প্রকৃত পরিসংখ্যানে সংখ্যা বাড়ছে। জুলাই মাস হতে হাসপাতাল থেকে তথ্য যুক্ত করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের রোড সেফটি প্রজেক্টও চলছে। পাশাপাশি রাস্তা উন্নত হওয়ায় ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওভার স্পিডের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলেও তিনি উল্লেখে করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বাড়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের এ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, এ সংখ্যা বর্তমানে যথেষ্ট নয়। তাদের টার্গেট দেওয়া হয়েছে মামলার বিষয়ে। একইসাথে ছয় বিভাগীয় শহরে ৬জন ম্যাজিস্ট্রেট যুক্ত হবেন। ওভার স্পিড, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন অপরাধে ড্রাইভারদের মার্কিংয়ে ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ করা শুরু হয়েছে বলেও জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। রাজধানীর গাড়িচালকরা ব্যাপকভাবে চোখের সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ২৮৯ জন চালকের চোখ পরীক্ষা করে ভিশন সমস্যা পাওয়া যায় ১৬৪ জনের, চোখের অন্যান্য সমস্যা পাওয়া যায় ৫৯ জনের ও চোখের কন্ট্রাক্ট সমস্যা পাওয়া যায় ৮ জনের। এ ছাড়া ২৪৯ জন চালকদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় রক্তচাপ সমস্যা পাওয়া যায় ৪৭ জনের। এ ছাড়া ব্লাড সুগার সমস্যা পাওয়া যায় ৬৯ জনের, ধুমপানজনিত সমস্যা পাওয়া যায় ১০৯ জনের। ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও বিআরটিএর পেশাদার চালকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চালকদের চক্ষু, রক্তচাপ ও র্যান্ডম ব্লাড সুগার পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এতে দেখা গেছে, অধিকাংশ চালক উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। ফলে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ঘটছে। আগামী ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে বিআরটিএর কর্মসূচি সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, জিরো পয়েন্ট হতে শিক্ষা ভবন হয়ে হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত, মৎস্য ভবন মোড়, ফার্মগেট হতে জাহাঙ্গীর গেইট হয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত, সার্ক ফোয়ারা, শেরাটন মোড়, বিজয় সরণী মোড় হতে হেলিকপ্টার মোড়, তেজগাঁও ফ্লাইওভার থেকে সওজ ভবন পর্যন্ত সজ্জিতকরণ করা হবে। সাতরাস্তার মোড় হতে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত, হাইকোর্টস্থ কদম ফোয়ারা, মতিঝিলের শাপলা ও বলাকা চত্ত্বর, মেট্রো রেলের দিয়াবাড়ি থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত মূল রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ এন্ট্রেন্সসমূহ, ফুটওভার ব্রিজ, সব স্টেশন, ইন্টারসেকশন, গোলচত্ত্বর ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার দিয়ে সজ্জিত করা হবে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাস টার্মিনালে জনসচেতনতামূলক লিফলেট, স্টিকার বিতরণ ও ব্যানার প্রদর্শন করা হবে।