শরতের শিশির ভেজা সকালের কুয়াশা আচ্ছন্ন মেঘ বলে দেয় এই মাস দুর্গাপূজা উৎসবের মাস। চারদিকে কাশফুলে ও হালকা শীতের আবাস তাই তো বলে দেয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো শারদীয় দুর্গাপূজা।
শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করতে ২২টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এর মধ্যে প্রতিটি পূজামণ্ডপ বা মন্দিরে রাতে ভিডিও ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থাসহ নানা বিষয় রয়েছে।
দুর্গাপূজা হল শক্তির অধিষ্ঠাত্রী পার্বতীদেবীর দুর্গা রূপের উপাসনার উৎসব। দুর্গাপূজা শরৎ (আশ্বিন) এবং বসন্ত (চৈত্র) ঋতুর শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজা বছরের দুটি সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। একটি শরৎকালে, আরেকটি বসন্তকালে। বসন্তকালের দুর্গাপূজাকে বলা হয় বাসন্তীপূজা। আর শরৎকালের দুর্গাপূজাকে বলা হয় শারদীয় দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গাপূজাই অধিকতর আড়ম্বরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। শরৎকালে নীল আকাশে দেখা সাদা মেঘের ভেলা। ফসল ওঠার পর কৃষিজীবনে তখন অবসর। তখন দুর্গাপূজায় ভক্তরা উৎসবে মেতে ওঠে। তাই দুর্গাপূজা শুধু পূজা নয়, উৎসব। পূজা করে হিন্দু ভক্তরা। এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায়। যার ফল খুব একটা শুভ বার্তা দেয় না।
দুর্গাপূজার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রতিমা তৈরির কাজ, মণ্ডপ সাজানো, পূজা করা, এবং ভোগ প্রসাদ বিতরণ করা তার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। তবে পূজোয় প্রতিমা তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মৃৎশিল্পীরা তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ প্রতিমা তৈরি করে থাকে। প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে। প্রতিমা তৈরির পরে তা পূজা মণ্ডপে স্থাপন করা হয়। এরপর শুরু হয় মণ্ডপের সাজসজ্জা যা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মণ্ডপে বিভিন্ন ধরনের আলোকসজ্জা দিয়ে মণ্ডপের ভেতর সাজানো হয় তাছাড়া প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন নকশা দিয়ে মণ্ডপের
সাজসজ্জা এবং আলোকসজ্জা দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কাজ করা হয়।
দুর্গাপূজায় পূজো বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বাঙালিরা মা দুর্গাকে শ্রদ্ধা, ভক্তি দিয়ে পূজা অর্চনা করে তাকে সম্মান জানানো হয়।
মা দুর্গার বিভিন্ন রূপ: দুর্গা মূলত শক্তি দেবী। ঋগে¦দে দুর্গার বর্ণনা নেই, তবে ঋগে¦দে দোক্ত দেবীসূক্তকে দেবী দুর্গার সূক্ত হিসাবেই মান্যতা দেওয়া হয়। দেবী দুর্গা নির্গুণ অবস্থায় এই জগৎসংসারে বিরাজ করেন। তার জন্ম হয়না, আবির্ভাব ঘটে। যেসকল পুরাণ ও উপপুরাণে দুর্গা বা দেবী সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে সেগুলো হল: মৎস্যপুরাণ ,মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবীপুরাণ, বামন-পুরাণ, কালিকাপুরাণ, স্কন্দণ্ডপুরাণ, বরাহ-পুরাণ, শিবপুরাণ ও দেবী ভাগবত। তিনি জয়-দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বন-দুর্গা, চন্ডী, নারায়ণী, কালী, গৌরী, উমা, মহা-দুর্গা, অগ্নি-দুর্গা, শূলিনী দুর্গা, সিন্ধু-দুর্গা, মূলা দুর্গা, মহামায়া, মহিষমর্দিনী, চামুণ্ডা প্রভৃতি নামে ও রূপেও পূজিতা হন।
দুর্গাপূজার কিছু রীতিনীতি নিম্নরূপ:
বোধন: ষষ্ঠীর দিন সকালে দুর্গার বোধন করা হয়। এ দিন কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয়ে দুর্গার বোধন। এ দিনে দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয় যে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত কোনো বিঘ্ন না ঘটে। এরপরে ঘট ও জলে একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোনে স্থাপন করা হয়।
চ-ীপাঠ: চ-ীপাঠ হলো সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্ম গ্রন্থ পুড়ানে বর্ণিত দেবীর দুর্গার মাহাত্ম্য পাঠ। তাই চ-ীপাঠ দুর্গাপূজায় পাঠ করা হয়।
পূজা: দুর্গা পূজার সময় দেবী দুর্গাকে পূজা করা হয়। এই পুঁজয় দেবীকে ফুল, ফল, মিষ্টি, দীপ, দুপ দিয়ে পূজা অর্পণ করা হয়।
বিসর্জন: দুর্গা পূজার শেষ দিন অর্থাৎ বিজয়া এই দিনে দেবী দুর্গাকে সিঁদুর পানপাতা দিয়ে বরণ করে দেবীকে বিসর্জন দেয়া হয়।
প্রথম দিন: ষষ্ঠী এই দিনে লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ দেবী দুর্গার হাত দরে বাপের বাড়ি আগমন করেন। এই দিন থেকেই পূজোর সমস্ত আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমে দেবীর মুখ উন্মোচন করে ষষ্ঠী পূজো শুরু করা হয়।
দ্বিতীয় দিন: সপ্তমী এই দিনে দেবীকে পূজো করে ভোগ নিবেদন করা হয়।
তৃতীয় দিন: অষ্টমী এই মহাষ্টমী তিথিতে দেবীকে কুমারী ও চামুণ্ডা রূপে পুজো করা হয়ে থাকে।
চতুর্থ দিন: এই দিনটিকে বলা হয় নমমী, এই দিনটিতে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনি পাঠ করা হয়।
পঞ্চম দিন: এই দিনটিতে দেবী দুর্গার বিসর্জন দেয়া হয়। দুর্গাপূজার এই পাঁচ দিন হিন্দুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই পাঁচদিনে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ প্রার্থনা করে থাকে। এই বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে সনাতনীদের বৃহৎ শারদীয় দুর্গা পূজো শেষ হয়,‘আসছে বছর আবার হবে’।