বর্তমানে হিজড়া যেন এক আতঙ্কের নাম। এরা রাস্তাঘাটে, বাস-ট্রেনে, যেখানে সেখানে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। হিজড়াদের উৎপাত এতদিন শহরে লক্ষ করা গেলেও বর্তমানে গ্রামেও এদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে, শপিংমলে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে, ফুটপাত থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতে, বিয়ে অনুষ্ঠানে কিংবা যে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে তাদের উৎপাত দিন দিন বাড়ছেই। তৃতীয় লিঙ্গের বা হিজড়াদের চাঁদাবাজির এখন চরম আকার ধারণ করেছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, কিছু দনকল’ হিজড়া যারা মূলত পুরুষ; অথচ হিজড়া সেজে বাড়ি বাড়ি চাল ও টাকা আদায় করছে। তাদের কাজে কেউ বাধা দিলে তারা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে প্রকাশ্যেই কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে। হিজড়ারা বিভিন্ন দোকান, মার্কেট ও বাসা বাড়িতে দল বেধে গিয়ে টাকা তুলে। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তার ওপর রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে হিজড়ারা। এদের ভয়ে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ তড়িঘড়ি করে ঝামেলা এড়াতে টাকা দিয়ে থাকে। টাকা দিতে কেউ না চাইলে হিজড়ারা তাকে নাজেহাল করে। এমন কী তাদের হাতে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। রাজধানীর উত্তরা, বনানী, গুলশান, ফার্মগেট, পরীবাগ ফুট ওভারব্রিজ, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচ, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সংসদ ভবন এলাকা, চন্দ্রিমা উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে রাত হলেই অধিকাংশ হিজড়া পতিতাবৃত্তিতে নেমে পড়ে। এদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করা হলেও তেমন কোন প্রতিকার পাওয়া যায়না। এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, হিজরাদের দ্বারা তোলা চাঁদার ভাগ পায় পুলিশ থেকে শুরু করে রাঘব বোয়ালদের অনেকেই। ফলে হাজারো অভিযোগ সত্ত্বেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়না। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় সরকারি হিসেবে দেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার, কিন্তু বেসরকারি হিসেবে তাদের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এসব হিজরারা বেশিরভাগই অবস্থান করেন ঢাকায়। প্রত্যেক হিজড়াই কোন না কোন ডেরা’র গুরু মা’র অধীনে। চাঁদার ৩ ভাগের ২ ভাগই দিন শেষে জমা দিতে হয় গুরু মা’র কাছে। সকালে ডেরা থেকে বের হওয়ার আগে এলাকাভিত্তিক চাঁদার টার্গেট দিয়ে দেন গুরু মা। তাই এখনি সরকারকে এদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে সমাজসেবা অধিদপ্তর ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে পাইলট কর্মসূচি চালু করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ৬৪ জেলায় বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই কর্মসূচির আয়োতা বাড়াতে হবে। হিজড়াদের অনেকেই পথেঘাটে ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে, এসব হিজরাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দনকল’ হিজড়া চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। সর্বোপরি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে এই সমস্যার সমাধানে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।