দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাঁচার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেই দায়ী করা হচ্ছে, তবে সব দায় তাদের কাঁধে চাপানো কি যথার্থ? করোনা ও যুদ্ধ অবশ্যই এই সংকটের কারণ। তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে অর্থপাঁচার বাড়ছে। দেশে যাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা, এসব অনাচার-অনিয়ম-দুর্নীতি-পাঁচার বন্ধ করার কথা, তারা তা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতাতেই এ কাজগুলো হচ্ছে। যারা অর্থপাঁচার বন্ধ ও উদ্ধারের জন্য কাজ করবেন, তারা নিজেরাই যদি এর সহযোগী হন, তাহলে কীভাবে সেই কাজ হবে? সরকার যদি জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সহসাই এ সংকট সহসাই কাটবে না। তবু আমাদের বিবেকের দায় থেকে, দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে সরকারকে এসব অন্যায়, দুর্নীতি, লুটপাট, পাঁচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। কেননা এই অবস্থাই রিজার্ভ সংকটের প্রধান কারণ। দেশ থেকে অর্থ পাঁচারের কারণে একদিকে বাণিজ্যে গতিশীলতা কমেছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে আয় বাড়াতে অনেকটা নিরুপায় হয়ে নতুন কর আরোপের পথে হাঁটতে হচ্ছে। তবে এটা সবার মাথায় রাখা উচিত, দেশ থেকে টাকা পাঁচার হলে সরকার অর্থ সংকটে পড়ে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও অর্থ সরবরাহ কমে। সরকার খরচ চালাতে শর্ত মেনে বাধ্য হয়ে ঋণ নেয়, কর আরোপ করে। যে মানুষটি তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পায় না তার কাঁধেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঋণ ও কর পরিশোধের দায় চাপে। অর্থ পাঁচার একটি ভয়াবহ ব্যাধি। এই রোগ সারাতে না পারলে একটি দেশের অর্থনীতির অসুখ বাড়তে থাকে। গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৪ শতাংশ কমেছে। তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবমূল্যায়নকে থামানো যাবে না। আর এজন্য প্রয়োজন পুঁজি পাঁচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও বিষয়টিকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার দেওয়া। এসব পাঁচারকৃত অর্থ কোথায় গেছে? তা অনুসন্ধানি করে খুঁজে বের করা ও এর সাথে জরিত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিপ্রদান করা।