আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এটাই শেষ বার্তা। এমনটি বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার ওবায়দুল কাদের রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব সরকারের পদত্যাগের শেষ বার্তা দিয়েছেন। আমিও শেষ বার্তা দিচ্ছি। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা হবেন নির্বাচনী সরকারের প্রধানমন্ত্রী। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আবারও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন, এটাই আমাদের শেষ বার্তা। সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে এসে যোগ দেন। সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আগামী নির্বাচন বানচালের যেকোনো অপচেষ্টা রাজপথে অবস্থান নিয়ে প্রতিহত করার প্রত্যয় জানান। রাজপথ দখলে রেখে বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন নেতারা। নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ৮০ দিন রাজপথে থাকার ঘোষণা আসে সমাবেশ থেকে। এ সময় সমাবেশ নেতারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। একই সময়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বায়তুল মোকাররমের অদূরে নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন ও শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে এ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের আয়োজন করে। এ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে বক্তব্য দেন- দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ। শাজাহান খান বলেন, বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের জন্য নাকি পিটার হাঁস অবতার হিসেবে অবতরণ করেছেন। তাদের জনগণের প্রতি বিশ্বাস নেই। পাকিস্তান আর যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে নির্ভর করছে। আমরা জনগণে বিশ্বাসী। এ জনগণের সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ যাত্রা অব্যাহত রাখবো। ঢাকাকে কাউকে অবরোধ করতে দেওয়া হবে না। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, কিছু দূরে তারা (বিএনপি) সভায় করছে। এ সভা আগামী দিনে খুন করার পরিকল্পনার সভা। তারা অস্ত্র জোগাড় করছে। বোমা তৈরির কারখানা করছে। তারা নাকি রাজপথ দখল করবে। পূজার পরে আমরাও মাঠে নামবো। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর মাঠে নামলে এমন প্যাঁদানি দেবে, বুড়িগঙ্গা ছেড়ে যেতে হবে। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা এখানে সমাবেশ করছি। আধা কিলোমিটার দূরে সমাবেশ করছে তারা। একপাশে মুক্তিযুদ্ধের শক্তি। আরেক পাশে বিরুদ্ধ শক্তি। এ হচ্ছে ব্যবধান। ওই খুনিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়, কোনো সংলাপ নয়, কোনো সমঝোতা নয়। সংবিধান সম্মতভাবে নির্বাচন হবে, একচুলও সরার সুযোগ নেই। এরা অস্ত্র সংগ্রহ করছে। আগামীতে একটা নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়। কিন্তু আপনারা সতর্ক থাকবেন, রাজপথ আমাদের দখলে থাকবে। মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, কুকুরের লেজ ধরে রাখলে সোজা থাকে, ছেড়ে দিলে যেই সেই। বিএনপি-জামায়াতের একই অবস্থা। তাদের যতই ছেড়ে দিয়েছি, তারা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। তাদের ছাড় দেওয়া যাবে না। তাদের বাংলার মাটি থেকে ধূলিসাৎ করতে হবে। আমরা মাঠ ছাড়বো না। আবারও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে ঘরে ফিরবো। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, শেখ রাসেলের জন্মদিনে তাকে স্মরণ করে আমরা কান্নায় ভেঙে পড়ছি। আর খুনির দলেরা বাগাড়ম্বর করছে। এটিই স্বাভাবিক। ওরা খুনি জিয়ার দল, খুন তারেকের অনুসারী। ওরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সাবধান দেশবাসী, সাবধান। সতর্ক হোন দেশবাসী। শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ ওদের ভালো লাগে না। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ভালো লাগে না। কৃষক তাদের সঠিক মূল্য পাঁচ্ছে ওদের ভালো লাগে না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে তিনি বলেন, অবরোধ করবেন, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবেন, তাহলে দাতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আবদুর রহমান বলেন, শেখ রাসেলের রক্তে যাদের হাত লালে লাল হয়েছিল, সেই অশুভ শক্তি গোটা বাংলাদেশে অশান্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ ধরবার চিন্তা করে নতুন করে ১৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চায়। সেই দিন আর আজ এক নয়। রাসেলের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। ওই শক্তি বাংলার মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবো না। তিনি বলেন, ওরা পূজার পরে ১০ লাখ লোক নিয়ে ঢাকার ঘেরাও করার কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ওরা যেদিন কর্মসূচি দেবে, সাড়ে তিন হাত লাঠি নিয়ে আসার প্রস্তুত আছেন কি না, দেখিয়ে দেন। এ সময় নেতাকর্মীরা হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেন। শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, তারা (বিএনপি) দেশের পুতুল সরকার বসাতে চায়। এখন ব্যানার দেখানো আর স্লোগানের সময় নয়। সময় হলো তৃণমূল পর্যায়ে অবস্থান নেওয়ার। পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নিতে হবে। জাতির জনকের ৭ মার্চের আহ্বানের মতো আহ্বান জানাই, আমাদের ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়তে পারি, পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নিতে পারি, তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে, জনগণ আমাদের শক্তি। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান, সাদেক খান, এসএ মান্নান কচি, হুমায়ুন কবির, নূরুল আমিন রুহুল, আবদুল কাদের খান, কাজী মোরশেদ কামাল, মাহবুবুর রহমান হিরণ, দিলীপ রায় ও আজিজুল হক রানা।