রাজধানীতে বহুতল ভবনে আগুন-বিস্ফোরণ, ভূমিকম্পে ভবনে ফাটল, ভবনধস বা হেলে পড়া- ঢাকা শহরের নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাসযোগ্য নগর গড়তে তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে প্রতিনিয়ত চলছে ব্যবসা ও বসবাস। বর্তমানে ঢাকা নগরীতে রয়েছে অসংখ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ ইমারত। এসব ইমারত অনেক আগেই ব্যবহার অযোগ্য ঘোষিত হলেও ব্যবহার করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই। ফলে রাজধানীতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ভবনে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। তবে কোন দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আসলে রাজধানীতে কত সংখ্যক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ এর প্রকৃত হিসাব কারও কাছে নেই। তবে রাজউক বলছে, রাজধানীতে অন্তত ৯০ শতাংশ ভবন তৈরির ক্ষেত্রে নকশার ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হচ্ছে না। তারা এই অভিযোগ করেই নিজেদের দায়সারার চেষ্টা করছে। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব যে তাদেরই সেকথা তারা ভুলতে বসেছেন। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তেমন কোন নজরদারি নেই। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা তোয়াক্কা না করেই ঢাকা শহরে ১০ তলার ওপরে ১ হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। এসব ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে শহরের দুই-তৃতীংশ ভবন ধসে পড়তে পারে বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ রাজউকের মূল দায়িত্ব কিন্তু এই ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যর্থ। রাজউকের আওতাধীন এলাকায় নিয়মের ব্যত্যয় করে বহু ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনও দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। কিন্তু কেউ তদারকি করছে না। রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, নগর অবকাঠামো মজবুত রাখতে তারা সদা সচেষ্ট। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ভবন নির্মাণ অনুমোদন দিয়েই দায়িত্ব শেষ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। ভবনটি ভূমিকম্পসহনীয় করে নির্মিত হলো কি না, সে বিষয়ে কোনো তদারকি নেই তাদের। যে নকশার মাধ্যমে ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়, সেটি জমা নেয় না তারা। এছাড়াও কাঠামোগত নকশা না মানায় কারও বিরুদ্ধে কখনো মামলা হয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। যে উদ্দেশ্যে সংস্থাটি গঠন করা হয়েছিল, নাগরিকরা তার সুফল পাননি। এমতাবস্থায় নগরজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করতে রাজউক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। একই সাথে আগামীতে যাতে কেউ বিধি লঙ্ঘন করে কেউ ইমারত নির্মাণ করতে না পারে সে জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। নয়তো নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে নগর জীবন।