সঠিক অনুধাবনের অভাবে দিন দিন শব্দদূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ঢাকা শহরের শব্দদূষণ যে পর্যায়ে অবস্থান করছে তা খুবই আশঙ্কাজনক। বর্তমান সময়ে বায়ুদূষণ-পানি দূষণ রোধ এবং বনায়নের বিষয়গুলো আলোচিত হলেও শব্দদূষণ সম্পর্কে আলোচনার গণ্ডি একেবারেই সীমিত। শব্দদূষণের কারণে মারাত্মক রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে, সে সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংগঠন এ নিয়ে কাজ করলেও তা সমস্যার তুলনায় খুবই সামান্য। বিশেষ করে ঢাকা শহরে শব্দদূষণের বহু উৎস রয়েছে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পণ্ডকারখানা কোনো ক্ষেত্রেই শব্দদূষণ বিষয়ে যেসব নিয়ম রয়েছে তা মানা হচ্ছে না। ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা এবং ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে যানবাহনের চালকদের বিনা কারণেই হর্ন বাজাতে দেখা যায়। এমনকি প্রাইভেট কার বা জিপের মালিক গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় চালক বিনা কারণে হর্ন বাজালেও মালিককে নির্বিকার দেখা যায়। কিন্তু তাদের এ কাজটি রাস্তায় চলাচলকারী অন্যদের কী ক্ষতি করছে, সে বিষয়ে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমাদের বড় শহরগুলোর শব্দদূষণে শুধু যারা রাস্তায় আছে তারাই যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়। ঢাকার শব্দদূষণে রাস্তার পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোর মানুষ নিজের বাসায় থেকেই শব্দদূষণে আক্রান্ত হচ্ছে এবং স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের গাড়িচালকদের শব্দদূষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের লাইসেন্স নেওয়ার সময়ও এ বিষয়ে জ্ঞানের তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। আবার রাস্তায় উচ্চহারে শব্দদূষণ করে গেলে তেমন শাস্তিও হয় না। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশেই হাজার হাজার যানবাহন চলছে প্রায় কোনো হর্ন বাজানো ছাড়াই। ঢাকাসহ সব বিভাগীয় ও জেলা শহরে নতুন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে অবিরাম। এসব নির্মাণকাজের মেশিনগুলোর উচ্চ শব্দের কারণে পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোতে বসবাসকারী মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। এসব নির্মাণকাজের আবার সময়-অসময়েরও কোনো ঠিক নেই। সকাল-বিকাল, রাত-দিন, এমনকি নির্মাণকারী সংস্থা প্রয়োজন হলে মাঝরাতেও মেশিন চালাতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। ছাত্র-ছাত্রী, শিশু, হাসপাতালের রোগী, ট্রাফিক পুলিশ, পথচারী ও গাড়ির চালকরা শব্দদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণ দিন দিন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কঠোর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই হর্ন বন্ধে অব্যাহতভাবে অভিযান/মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা এবং ট্রাফিক আইনে হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। হাইড্রোলিক হর্ন যাতে কোনোভাবে আমদানি হতে না পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া, লাইসেন্স প্রদানের সময় চালকদের শব্দসচেতনতার স্তর যাচাই করা এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক সভা করা জরুরি। অনুমতি ছাড়া সভা-সমিতি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে লাগামহীনভাবে মাইক বাজানো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শব্দদূষণের কারণ ও ক্ষতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। এ খেক্ষে সরকারের ভূমিকা জরুরি।