ঢাকাবাসীর সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট। যানজটের ভোগান্তি যেন ঢাকাবাসীর ‘নিয়তি’। মূল সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার সংযোগ সড়ক। রাস্তায় বেরিয়ে যানজটে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। যানজট নিয়ে সব সড়কের চিত্রই যেন এক। কখনো কখনো ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এখন এক ঘণ্টা নয়, দু-তিন ঘণ্টাও লেগে যায়। অতীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক গবেষণায় ঢাকার যানজটের পরিধি, মানুষের জীবনযাত্রায় তার প্রভাব, যানজটে প্রতিদিন কত কর্মঘণ্টা ক্ষতি হচ্ছে, অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কত-এমন অনেক তথ্য উঠে এসেছে। যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জ্বালানির ব্যবহার, পরিবেশদূষণ ও দূষণের ফলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যানজটে আটকা পড়ে সিগন্যাল থেকে বের হওয়ার পর দ্রুত গাড়ি চালানোতে জানমালের ক্ষতি এবং যানজটে সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপের ফলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাওয়া-এই পাঁচটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণা বলছে, ২০২০ সালের জুনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ কর্মঘণ্টা। টাকার অঙ্কে প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। একই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এক গবেষণায় বলা হয়, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বাদ দিয়েও বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ঢাকার যানজটে। এই ক্ষতি দেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশের সমান। মহানগরে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ যানজটে থেকে মানসিকভাবে ‘যুদ্ধ’ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঢাকার যানজট কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার যানজট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সীমিত সড়ক ও যানবাহনের আধিক্যে মাত্রাতিরিক্ত যানজট বাড়ছে। যানজট কমানোর লক্ষ্যে সরকার কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অনেক উড়াল সেতু করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রো রেল, বিআরটির মতো প্রকল্প আরো আগেই বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল। তাঁদের মতে, ঢাকার সড়ক ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানসম্মত নয়। প্রকল্পভিত্তিক সমাধানের চেয়ে ব্যবস্থাপনাভিত্তিক কর্মসূচি জরুরি। সরকার ঢাকা মহানগরের যানজট নিরসনের জন্য মেগাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। সড়কের পাশাপাশি গণপরিবহনব্যবস্থার উন্নতি করতে না পারলে ঢাকার যানজট নিরসন সম্ভব নয়। আর সে কারণেই উন্নত গণপরিবহনব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান বলেছেন, আমাদের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় বড় সমস্যা হলো মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন গাড়ি। বর্তমানে দেশে পাঁচ লাখের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি রয়েছে। ফিটনেসহীন গাড়িও আছে। এই গাড়ির একটি অংশ নিশ্চয় রাজধানীতেও চলাচল করে। যানজট কমাতে গণপরিবহনবান্ধব সড়ক ও পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মেট্রো রেলসহ অন্যান্য উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার পাশাপাশি গণপরিবহনের আরো সুন্দর নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।