রাজশাহীর পুঠিয়ায় বানেশ্বর হাট রাজনৈতিক রেষারেষির রোষানলে পড়ে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি দিয়ে ইজারা নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের একটি গ্রুপ। এখন ক্রেতা-বিক্রেতারা ইজারাদারদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছেন। খাজনা অতিরিক্ত নেওয়ার জন্য অনেক ক্রেতা-বিক্রেতারা হাটে কেনাবেচা বর্জন করেছে বলে আভিযোগ উঠেছে। উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি হাটের ভেতর অন্যতম হাট হলো বানেশ্বর। হাটের দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এ হাটে কেনাবেচা করতে আসেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের অবহেলা অনিয়মের কারণে হাটের সিংহভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তারা হাটের জায়গাগুলো অবৈধভাবে দখল করে গোডাউন দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। জানা গেছে, ১১.৮৫ একর জমির উপর বানেশ্বর হাটটি। সপ্তাহে দুইদিন হাট বসে। চলতি (১৪৩০সন) বছর হাটটি ইজারা হয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার ৫শত টাকা। আর গত (১৪২৯ সন) বছর ইজারা ছিল ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৩ হাজার ৭শত ৫০ টাকা। হাটের স্থায়ী দোকানদারা বলছেন,আগেরবার ক্ষমতাসীন দলের যে গ্রুপটি হাটটি ইজারা নিয়ে ছিলেন তারা ছিল বর্তমান পুঠিয়া-দুর্গাপুরের আসনের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির মানুষ। চলতি বছরে যারা হাট ইজারা নিয়েছে তারা সাবেক এই আসনের নেতার খুবই কাছের মানুষরা। শুধুমাত্র রাজনৈতিক রেষারেষির কারণেই হাটটি অতিরিক্ত ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি দিয়ে নিয়েছেন। হাটে ২ হাজারের অধিক স্থায়ী দোকানদার রয়েছে। হাটের দিন প্রতিটি দোকানদারের নিকট হতে সর্বনি¤œ ৪০ টাকা করে খাজনা বাবদ আদায় করা হয়ে থাকে। আগে ভাসমান ব্যবসায়ীদের নিকট হতে খাজনা নেওয়া হত ২০ টাকা করে নেওয়া হত। বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা করে। এই নিয়ে হাটের দিন কথাকাটাকাটি মারধর হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। খুটিপাড়া নামাজগ্রাম এবং ইজারাদারদের নিকট হাজার হাজার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। বেশি কথা বললেই মারপিঠ। এদের দ্বারায় নির্যাতন নিপীড়ন শিকার হচ্ছেন কিন্তু কোথাও লিখিত দেওয়ার সাহস পর্যন্ত পাচ্ছেন না দোকানদারা। অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে হাটে কেনাবেচা বর্জন করে হাটের অদুরে লাউ বেগুনের আড়ত গড়ে তুলেছেন। হাটের দোকানদারদের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসনের অবহেলার অনিয়মের কারণে বর্তমানে সিংহভাগ জায়গা কিছু টাউট শ্রেনীর স্থানীয় আ’লীগ,বিএনপির নেতাকর্মীরা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। হাটের জায়গা অবৈধভাবে দখল নিয়ে সেখানে নির্মাণ করেছে ব্যক্তিগত গোডাউন ঘর, স্থায়ী ভাবে পাকা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে রেখেছে। এতে করে হাটের অর্ধেক সরকারি জায়গা বেদখল হয়ে আছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বানেশ্বরহাটের দু’শতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ আর হচ্ছে না। বেশ কয়েক বছর ধরে বানেশ্বর হাটের অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত হয়ে আছে। হাটের জায়গা কমে যাওয়ায় কারণে ক্রেতা-বিক্রেতারা একপ্রকার বাধ্য হয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের উপর পন্য বেচাকেনা করতে গিয়ে মহাসড়কে র্দীঘক্ষণ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। অপরদিকে হাট কমিটির সদস্যরা বলছে, উপজেলা পরিষদ হাট হতে প্রতিবছর যে টাকা আয় করে। কিন্তু সরকারি নিয়মনুযায়ী হাটে ওপর ব্যয় করে না। পরিষদের অন্য কাজে নয়ছয় করে হাটের টাকাগুলি ব্যয় করতে দেখা যায়। জমসেদ আলি নামের ক্রেতা বলেন, আমি গত মঙ্গলবার হাটে একটি হাঁস কিনেছি। তার খাজনা নিয়েছে ৫০ টাকা। হাটের প্রতিটি খাজনা ধরা হচ্ছে দ্বিগুনের অধিক হারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বানেশ্বর হাটের বেশির ভাগ জায়গা দীর্ঘদিন যাবত জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন তারা হলো, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ এর ছোট ভাই আজিজুল বারি মুক্তা ১৫ শতক জায়গা দখল করে ভাড়া দিয়ে রেখেনে। শিবপুরের এনামুল হাজী ১৫ শতক জমি দখল করে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। চারঘাট উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের শাসুল হক সাবেক চেয়ারম্যান ৪ শতক, রহুল আমিন ৭ শতক, মৃত আনছার আলী ১০শতক, মৃত ময়েজ উদ্দিননের ছেলে মিন্টু ও তার ভাইরা মিলে ৪ শতক, তাতারপুর গ্রামের লুৎফর রহমান ১০শতক, বিহারি পাড়া গ্রামের হারুনুর রশিদ ৩ শতক, বালিয়াঘাটির মামুন ৫ শতক, রিয়াজুল কশাই ২ শতক, তিনশতাধিক দোকান ঘর,গোডাউন নির্মাণ করে অবৈধ দখল করে রেখেছে। অনেকে তাদের গোডাউন ঘর, অবৈধ হাটের দখল করা পজিশন বিক্রি এবং হাটের দিন দোকান ঘর ও গোডাউন ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে বানেশ্বর হাট ইজারদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিএনপি জামায়াতের হাত হতে হাটটি রক্ষা করার জন্য এত বেশি টাকা দিয়ে হাটটি নিয়েছি। তারপর, রাজশাহী জেলার ভেতরে বানেশ্বর হাটেই খাজনা সবচেয়ে কম নেওয়া হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম নুর হোসেন নির্ঝরকে অতিরিক্ত খাজনা এবং হাটে অবৈধ দখলদ মুক্ত কারার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, খাজনা বেশি নিচ্ছেন এ ব্যাপারে লিখিত দিলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অচিরেই অবৈধ দখলদাদের উচ্ছেদ করা হবে।