ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বিশ্বরোড মোড়ের পাশে খাঁটিহাতা গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক শরফত আলীর শিশুপুত্র শাব্বির মিয়াকে (০৯) গত ১৭ অক্টোবর রাতে অপহরণ করে একটি চক্র। অপহরণের পরের দিন ভোর বেলা একটি চিরকূট লিখে শিশুর পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। মুক্তিপণ না পাওয়ায় শিশু শাব্বিরকে হত্যা করে বাড়ির উত্তর পাশে পুকুর পাড়ে লাশ ফেলে যায়। গত শনিবার দুপুরের দিকে শাব্বিরের অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করেছেন সদর মডেল থানা পুলিশ। শাব্বির স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। রাতেই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে মাসুম ও তফাজ্জল নামের দুই যুবককে আটক করেছেন পুলিশ। পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদক জুয়াসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জর্জরিত খাঁটিহাতা গ্রামটি। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক শরফত আলীর শিশুপুত্র শাব্বির। বাড়ির পাশের একটি দোকান থেকে মজা ক্রয় করতে গত মঙ্গলবার বাদ মাগরিব বের হয় শাব্বির। এশার গড়িয়ে রাত গভীর হচ্ছে। শাব্বির বাড়িতে যাচ্ছে না। মা বাবা আত্মীয় স্বজনসহ গোটা গ্রামে খুঁজেও শাব্বিরের সন্ধান পাননি। পরের দিন সকাল ৬ টায় শাব্বিরদের বাড়িতে প্রবেশের রাস্তায় একটি চিরকূট পাওয়া যায়। চিরকূটে লেখা-‘ছেলেকে ফেরত পাইতে হইলে এই নম্বরে (০১৭৯০-৫৯৮৩৫৫) ২ লাখ টাকা পাঠাও। নতুবা মাইরা ফালামু।’ চিরকূট পেয়েই শাব্বিরের মা খালেদা বেগম ওই নম্বরে ফোন দেন। বিকৃত কন্ঠে ওই পাশ থেকে বলে, ‘ টাকা পাঠাও।’ মুঠোফোনে শাব্বিরের সাথে কথা বলতে চান খালেদা। শাব্বির বসের হেফাজতে আছে। এখন ঘুমিয়ে আছে। এমন সব অযুহাত দেখিয়ে সময় ক্ষেপন করে অপহরণকারীরা। ছেলেকে পেতে চারিদিকে পাগলের মত ঘুরতে থাকেন পিতা মাতা। এ ভাবে চলে যায় দুই দিন। ফাঁকে শাব্বিরের মা খালেদা অপহরণকারীদের দেয়া নম্বরে ফোন দেন। অধিকাংশ সময় ফোনটি রিসিভ হয়নি। মাঝে মধ্যে রিসিভ করলে বিকৃত শব্দে বলে, ২ লাখ টাকা পাঠাও। গত অক্টোবর শুক্রবার শাব্বিরের বাবা এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি জিডি করেন। জিডি করার পরের দিন শনিবার সকালে শরফত আলীর বাড়ির উত্তর পাশে গ্রামের কয়েকটি শিশু শামুক কূড়াতে যায়। একসময় পুকুর পাড়ে ওই শিশুরা শাব্বিরের অর্ধগলিত লাশ দেখতে পায়। লাশ থেকে তখন দূর্গন্ধ বের হচ্ছিল। শিশুদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে শাব্বিরের পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ শনিবার দুপুরের দিকে শাব্বিরের লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। ময়না তদন্ত শেষে শনিবার বাদ এশা শিশু শাব্বিরের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শনিবার রাতেই শাব্বিরের পিতা শরফত আলী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ও ৮ ধারায় (অপহরণ, মুক্তিপণ দাবী ও হত্যা) সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। নিহত শিশুর দাদা শুক্কুর আলী, দাদী মিনারা বেগম, মা খালেদা বেগম বলেন, অপহরণকারীরা ফোনে বলেছে ওই গ্রামের লোকের সহযোগিতা ছাড়া কী আমরা তোমাদের শাব্বিরকে আনতে পেরেছি? নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গ্রামবাসী বলেন, শরফত তো বিশাল অর্থ বিত্তের মালিক না। দিন আনে দিন খায়। গ্রামের কারো সাথে শত্রƒতা আছে এমনটাও আমাদের জানা নেই। মূলত শিশু শাব্বির স্থানীয় কোন মাদক ব্যবসায়ির গোপন বিষয় দেখে ফেলেছে। অথবা বড় ধরণের কোন অপরাধের স্বাক্ষী হয়ে গিয়েছিল। আর এ জন্যই নিস্পাপ শিশুটিকে অপহরণ করে এমন নির্মম ভাবে হত্যা করেছে পাষন্ডরা। এই ঘটনার রহস্য উৎঘাটন, আসামি গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে আমাদের সন্তানরাও নিরাপদ নয়। আমরা এখন এমনিতেই অত্যন্ত আতঙ্কগ্রস্থ আছি। সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, ঘটনার জড়িত সন্দেহে শনিবার রাতে খাঁটিহাতা গ্রামের দুই যুবককে আটক করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে বিকাশ নম্বর, অর্থ ইত্যাদির সাথে কিছুটা মিল পাওয়া যাচ্ছে। তবে এরা একেক সময় একেক ধরণের কথা বলছে। আমাদের তদন্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।