অসহায় হতদরিদ্র ক্ষতিগ্রস্থদের মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রদানকৃত ঢেউটিন আত্মসাৎ করে নিজ বাড়িতে রাখলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু। প্রতিটি টিনের গায়ে সিলমহর দিয়ে লেখা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার "ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর অর্থবছর ২০২১-২০২২।"হতদরিদ্র অসহায়দের জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত এই উপহারের টিন উপকারভোগীদের জন্য বরাদ্ধ। কিন্তু চেয়ারম্যান তার অসত উদ্দেশ্যে প্রতিটি বানে একটি করে কম দেন ইউপি চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বেশ কয়েক মাস আগে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি আকস্মিক ঝড়ে ওই ইউনিয়নের বসতবাড়িসহ ফসলাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ সময় ক্ষতি গ্রস্থদের নামের তালিকা প্রস্তুত করে সরকারি দপ্তরে জমাদেন ইউপি চেয়ারম্যান। তার মধ্যে ইউনিয়নের অসহায়,হতদরিদ্র এবং ক্ষতিগ্রস্থ ৩০ টি পরিবারের নামে ত্রাণ মন্ত্রনালয় কর্তৃক বরাদ্দের ঘর ছাউনির ৬০ বান টিন আসে অত্র ইউনিয়নে। চেয়ারম্যান তার ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতি বান টিন থেকে এক পিস করে মোট ৬০ পিস সরিয়ে রাখেন। সরিয়ে রাখা এসব টিন তিনি নিজ বাড়ির রান্নাঘরের পাশে লুকিয়ে রাখেন। চেয়ারম্যানের ভগ্নিপতির দেওয়া তথ্যমতে দেখা মেলে বাড়ির উঠানে টিনের ছাউনি দিবেন বলে চেয়ারম্যান এই টিন এনে রেখেছেন। অপরদিকে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম নিজের আপন ভাগিনাসহ কাছের বেশ কয়েকজন অসহায়,হতদরিদ্র ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও তাদেরকে ত্রাণের টিন প্রদান করেছেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে বাংলাদেশের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের একমাত্র নজরুল ইসলাম ঋতু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হওয়ায় সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকাবাসীর নিকট তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন কখনো অনিয়ম ও দুর্নীতি করবেন না এবং সর্বদা অসহায় হতদরিদ্রদের পাশে থেকে সেবা করে যাবেন। কিন্তু তিনি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিন আত্মসাৎ করার মধ্য দিয়ে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণের নিকট ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই ইউনিয়নে টিন পাওয়া কয়েকজন অসহায়, হতদরিদ্র পূর্ব বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সন্ন্যাসীর ছেলে মিলন, কর্ণ খোড়ার স্ত্রী রেখা রানী, লাল মিয়ার ছেলে ফারুক হোসেন আক্ষেপের সাথে বলেন, আমাদের চিয়ারমের নজরুল ইসলাম প্রতি বান থেকে একটি করে টিন কম দিলেও মাস্টার রুল খাতায় সমুদয় টিন উল্লেখ করে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। এসব টিন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম নিজ বাড়িতে ছাউনি দেবার জন্য প্রতিজন ব্যাক্তিকে একটা করে কমদিয়েছে। কিন্তু সরকারি নিয়ম মোতাবেক কোন টিন কম দেবার কথা নয়। আবার তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাবার জন্য বলছেন এ টিন একজন ব্যক্তিকে দিবেন, সেটা কোন ব্যাক্তি তাও বলতে পারেন নাই। নিছক এটা তার অসৎ উদ্ধেশ্য বলে প্রতিয়মান হয়। সরোজমিনে এসব ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে ঐ ইউনিয়নে গেলে হতদরিদ্র রেখা রানী অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, আমার কিছুই নেই বাবা। আমাগের চিয়ারমেন দয়া করে আমার টিন দিয়েছে কিন্তু প্রতি বানে একটি করে টিন কম দিয়ে ওই টিন দুটো তিনি নিয়ে গেছেন। এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, উপকারভোগীদের বান প্রতি টিন কম দিয়ে এইসব টিন চিয়ারমেন তার নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে ঐটিন কাউকে প্রদান করেছেন কিনা তা কেউ সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারেননি। প্রধানমন্ত্ররি দেওয়া ত্রানের টিন চেয়ারম্যান কেন এভাবে অসহায় দরিদ্র মানুষের ১ টা করে কমদিল এটাই ইউনিয়নে মানুষের প্রশ্ন। কেন তার নিজ বাড়ির টিনের ছাউনি দিবেন ? এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন,উপকারভোগী একজনের টিন আমার বাড়িতে রেখেছিল, তাদের বাড়ি নাকি জায়গা নাই এজন্য আমার বাড়িতে রেখে গেছে। ঐ টিন ইতোমধ্যে আমি তাদেরকে দিয়ে দিয়েছি। চেয়ারম্যানের বাড়িতে রাখা উকারভোগি ব্যাক্তির নাম পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তা বলতে পারেনি। চেয়ারম্যান আরও বলেন, বান প্রতি টিন কম দেওয়ার ব্যাপারটি সঠিক নয়। একটা কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য মিথ্যা ও ভুলভাল তথ্য ছড়াচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, বান প্রতি টিন কম দেওয়া এবং চেয়ারম্যানের বাড়িতে টিন থাকার ব্যাপারে আমি আপনার নিকট থেকেই জানলাম। ভুক্তভোগী কেউ যদি এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।