ঝালকাঠিতে স্বাবেক স্বামী কর্তৃক স্কুল শিক্ষিকা ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় সাবেক স্বামী ডাচ বাংলা ব্যাংকের পাবলিক রিলেশন অফিসার মো. ফরিদুল ইসলামের (৩৩) নামে গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারি করেছে আদালত। সোমবার দুপুরে বাদী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঝালকাঠি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম.এ হামিদ গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারির আদেশ দেন। এর আগে গত ১ অক্টোবর ফরিদুল ইসলাম, ফরিদের মা রিনা বেগম ও ভাই হামিদুর রহমান সুজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ও দণ্ডবিধির ৩০৬/৪১৯ ধারায় পিরোজপুর পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মো. বায়জিত আকন এ প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে। মামলার বিবরণ, তদন্ত প্রতিবেদন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটির সনজয় মিত্রর সাথে কথা বলে জানা যায়, ঝালকাঠি টাইগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুলতানা জাহান মুনার সঙ্গে ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের দারখি গ্রামের আমির আলীর ছেলে ও ঝালকাঠি ডাচ বাংলা ব্যাংকের পাবলিক রিলেশন অফিসার মো. ফরিদুল ইসলামের ২০১৩ সালের ২২ জুলাই বিবাহ হয়। তাদের সংসারে হুমায়রা মেঘা (৮) নামে একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে যৌতুকের জন্য মুনাকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতে থাকে স্বামী, শ্বাশুরি ও দেবর। এ অবস্থায় আসামিদের অত্যাচার-নির্যাতনের ফলে ২০২২ সালের ৩০ জুন উভয়ের সম্মতিতে খোলা তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। কয়েকমাস পর স্বাকে স্বামী ফরিদুল নিজের ভুল স্বীকার করে ‘মেয়েকে ছাড়া বাঁচবে না’ জানিয়ে মুনার কাছে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় বিয়ের অনুরোধ জানায়। শিশু মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মুনাও কিছুচটা নমনীয় হলে ফরিদ তাদের ফুসলিয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার হরিনপালা পার্কে মেয়েসহ বেড়াতে নিয়ে যায়। ফরিদুল প্রতারণা করে মুনাকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় পার্কের রিসোর্টে বসবাস করে ( প্রতারণা করে ধর্ষণ করে)। সেখানে ফরিদ বলে ঝালকাঠি ফিরে ১ সেপ্টেম্বর পুনরায় তাঁরা কাবিন রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করে সব ভুলে একত্রে বসবাস করবে। কিন্তু ঝালকাঠি ফিরে নির্ধারিত তারিখে ফরিদুল গাঢাকা দিলে প্রতারণা বুঝতে পেরে মুনা মানসিকভাবে ভেঙে পরে। এ ব্যাপারে সেদিন ঝালকাঠি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে মুনা। পরের দিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ও সুইসাইড নোট লিখে একটি ডায়েরির মধ্যে রেখে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, দাম্পত্য কলহ ও অঙ্গীকারনামার কপি, হরিনপালা পার্কের ছবি, হোটেলের রেজিস্ট্রারের ছবি, মোবাইল সিডিআর, সুইসাইড নোট, হাতের লেখাসহ বিশেষজ্ঞ মতামত ও স্বাক্ষী প্রমানে প্রাথমিকভাবে সুলতানা জাহান মুনাকে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা দেন স্বামী ফরিদুল। উল্লেখ্য ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রতারণা ও অবিচারের শিকার হয়ে কৃষ্ণকাঠি এলাকার টাইগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুলতানা জাহান মুনা (২৯) শহরের বিশ্বরোডে তাঁর ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত সমবায় কর্মকর্তা মো. আবুল বাসার বাদী হয়ে ফরিদুল ইসলামসহ তিনজনকে আসামি করে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল ঝালকাঠি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিরোজপুরকে নিদের্শ দেয়। পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক মো. বায়জিত আকনকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বাদীর আইনজীবী ফয়সাল খান বলেন, বাদীর মেয়ে মুনার সাবেক স্বামী ফরিদুল প্রতারণা করে তাঁর সাবেক স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে এটি প্রাথমিকভাবে প্রমান হয়েছে। তাই আদালত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী জারি করেছে।