“সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সর্বমোট ৯২৫ কোটি ৪ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা আয় ও সমপরিমাণ টাকা ব্যয় ধরে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আজ ২৬অক্টোবর দুপুরে সিলেট নগরীর দক্ষিন সুরমাস্থ একটি অভিজাত কনভেনশন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাজেট উপস্থাপন করেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর সর্ব প্রথম দলীয় প্রতীকে হওয়া ২০১৮সালের সিটি নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনোনিত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ২য় মেয়াদে নির্বাচিত হন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। টানা ১০ বছর (আংশিক কিছু সময় ব্যতীত) নগর পিতার আসনে দায়িত্ব পালনকারী আলোচিত মেজিক মেয়র আরিফুল হকের এটাই সমাপনী বাজেট হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মেয়র আরিফুল হকের নির্বাচনী সময়সীমা আগামী মাস নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাকী আছে। সর্ব শেষ ২০২৩ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং সফত পাঠ করেন। যদিও পূর্বের নির্বাচনী মেয়াদের সময়সীমা শেষ না হওয়ায় এখনো মেয়রের আসনে বসেননি নবনির্বাচি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান। এবং ২০২৩ সালের এই নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্বতা পোষন করে মেয়র পদে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান বিএনপি চেয়ারপারর্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটির দুই বারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রস্তাবিত বাজেটে সমপরিমাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। বাজেটে উল্লেখযোগ্য আয়ের খাত গুলো হলো হোল্ডিং ট্যাক্স ৪৮ কোটি ৩৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা, স্থাবর সম্পত্তি হস্থান্তরের উপর কর ২৫ কোটি টাকা, ইমারত নির্মাণ ও পুনঃ নির্মাণের উপর কর ২ দুই কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স ১০ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা, বিজ্ঞাপনের উপর কর ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, বিভিন্ন মার্কেটের দোকান গ্রহীতার নাম পরিবর্তনের ফি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৮০ লক্ষ টাকা, ঠিকাদারী তালিকাভুক্তি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা, ল্যাব টেষ্ট ফিস বাবদ ৬০ লক্ষ টাকা, বাস টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ২ কোটি টাকা, ট্রাক টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ৫০ লক্ষ টাকা, খেয়াঘাট ইজারা বাবদ ২০ লক্ষ টাকা, সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি ও দোকান ভাড়া বাবদ ৫ কোটি টাকা, রোড রোলার ভাড়া বাবদ আয় ৫০ লক্ষ টাকা, রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ বাবদ আয় ৩০ লক্ষ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে আয় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, দক্ষিণ সুরমায় জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্কের টিকিট বিক্রয় থেকে আয় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকাসহ রাজস্ব হিসাব উপাংশ ১ এ মোট ১০৫ কোটি ১২ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা এবং পানির সংযোগ লাইনের মাসিক চার্জ বাবদ ৭ কোটি টাকা, পানির লাইনের সংযোগ ও পুনঃসংযোগ ফিস বাবদ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, নলকুপ স্থাপনের অনুমোদন ও নবায়ন ফি বাবদ ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকাসহ রাজস্ব হিসাব উপাংশ ২ এ মোট ১৮ কোটি ২৭ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা। সম্মানীত নগরবাসী নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা পরিশোধ করলে বাজেট বছরে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব খাতে সর্বমোট ১২৩ কোটি ৪০ লক্ষ ১১ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। বাজেটে সিলেট সিটি কর্পোরেশন, নন-ডিপিপি এবং ডিপিপি সরকারি অর্থায়নে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে প্রাপ্তি ৫২৬ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা এবং নিজস্ব মার্কেট নির্মাণ খাতে ৩৭ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে। এবারের বাজেটে রাজস্ব খাতে সর্বমোট ১১২ কোটি ৩৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তন্মধ্যে সাধারণ সংস্থাপন খাতে ৫২ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা, শিক্ষা খাতে ব্যয় ৪ কোটি ১০ লক্ষ টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা, পরিচ্ছন্নতা খাতে ব্যয় ১৯ কোটি ৬০ টাকা, বিদ্যুত প্রকৌশল/সড়ক বাতি খাতে ব্যয় ৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সমাজকল্যান ও বস্তি উন্নয়ন খাতে ব্যয় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা, বিবিধ ৭ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা, এর মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ খাতে ৫০ লক্ষ টাকা, বৃক্ষ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪৫ লক্ষ টাকা, মোকদ্দমা ফি ও পরিচালনা ব্যয় বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা, জাতীয় দিবস উদযাপন খাতে ৯০ লক্ষ টাকা, নাগরিক সম্বর্ধনা ও আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ ৮০ লক্ষ টাকা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি ব্যয় খাতে ১৫ লক্ষ টাকা, মেয়র কাপ ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্ট ব্যয় বরাদ্দ ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, রিলিফ/জরুরী ত্রাণ ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা, আকস্মিক দূর্যোগ/বিপর্যয়/করোনা ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা, কার্যালয়/ভবন ভাড়া বাবদ বরাদ্দ ১ কোটি টাকা, নিরাপত্তা/সিকিউরিটি পুলিশিং ব্যয় খাতে ৯০ লক্ষ টাকা, ডিজিটাল মেলা আয়োজনে ব্যয় বরাদ্দ ২০ লক্ষ টাকা উল্লেøখযোগ্য। এ ছাড়া পানি সরবরাহ শাখার সংস্থাপন ব্যয় সহ পানির লাইনের সংযোগ ব্যয়, পাম্প হাউজ, মেশিন, পাইপ লাইন মেরামত সংস্কার ও বিদ্যূত বিল পরিশোধসহ মোট ১৮ কোটি ০১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে রাজস্ব খাতে ব্যয় বাবদ মোট ৩৩ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তন্মধ্যে রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা মেরামত/সংস্কার, ব্রীজ/কালভার্ড নির্মাণ, ব্রীজ/কালভার্ড মেরামত/ সংস্কার, ড্রেইন নির্মাণ/মেরামত, সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি ও সম্পদ ক্রয়, সিটি কর্পোরেশনের ভবন নির্মাণ/মেরামত, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ষ্টাফ কোয়াটার নির্মাণ ও সংস্কার, ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব লিয়াঁজো অফিসের জন্য ফ্ল্যাট ক্রয়, কসাই খানা নির্মাণ/ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা উন্নয়ন, সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষায় গ্যারেজ নির্মাণ, সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষণা-বেক্ষনে ওয়ার্কসপ নির্মাণ, হাট বাজার উন্নয়ন, বাস টার্মিনাল সংস্কার ও উন্নয়ন, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় পাঠাগার নির্মাণ, নাগরিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, গভীর নলকুপ স্থাপন, এমজিএসপি প্রকল্পের রক্ষনা-বেক্ষন কাজের নিজস্ব অর্থ ব্যয়, সিটি কর্পোরেশনের জন্য জীপ গাড়ী ও ২টি আধুনিক এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় এবং নারীদের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহন ব্যয়সহ ইত্যাদি ব্যয় উল্লেখযোগ্য। নন-ডিপিপি, ডিপিপি সরকারি অর্থায়নে এবং উন্নয়ন অংশীদার অর্থায়িত প্রকল্প সমুহের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে ৫২৬ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকারি উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দ খাতে ১০ কোটি টাকা, কোভিড-১৯ মোকাবেলা, ডেঙ্গু মোকাবেলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার উপ-খাত সহ সরকারি বিশেষ মঞ্জুরী খাতে ৩৪ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প খাতে ১৮৫ কোটি ১২ লক্ষ টাকা, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সিলেট মহানগরীর ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ৪৫ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা, হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং হযরত শাহপরান (রহঃ) মাজার উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্প খাতে ২৯ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা, নগর ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ প্রকল্প খাতে ১১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা, দক্ষিণ সুরমায় জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্কে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাইড স্থাপন খাতে ২ কোটি টাকা, সিটি করপোরেশন প্লাষ্টিক রিসাইক্লিং প্লান্ট স্থাপন ৫ কোটি টাকা, তোপখানাস্থ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ভুমিতে আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার ও ষ্টাফ কোয়াটার নির্মাণ প্রকল্প খাতে ৫ কোটি টাকা, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মাজার, কবরস্থান, শ্মশান ঘাট, ঈদগাহ উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ১০ কোটি টাকা, সুরমা নদীর উত্তর তীর ঘেষে সার্কিট হাউসের সম্মুখ তে বোরহান উদ্দিন সড়ক পর্যন্ত রিটেননিং ওয়াল এবং ওয়াকওয়েসহ রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প ১০ কোটি টাকা, উৎপাদন নলকূপ স্থাপন ৫ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্যুয়ারেজ মাষ্টার প্লান্টের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নক্সা প্রণয়ন প্রকল্প ৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন ছড়া খনন ও প্রকিবন্ধকতা অপসারন প্রকল্প ১০ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীর যানজট নিরসন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প খাতে ৫ কোটি টাকা, সিটি করপোরেশন এসফল্ট প্লান্ট স্থাপন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে জমি অধিগ্রহণ খাতে ২০ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ফিলিং ষ্টেশন স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, কুমারপাড়াস্থ সিটি কর্পোরেশনের ওসমান মিয়া মার্চেন্ট মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীতে যানজট নিরসনে ৪টি পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪টি গরুর হাট নির্মাণ খাতে ৮ কোটি টাকা, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪টি জবাইখানা নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন খাতে ৭ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অফিস নির্মাণ খাতে ১০ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অফিস স্থাপনে ভূমি ক্রয় খাতে ১০ কোটি টাকা, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় খেলার মাঠ নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, নগরীর বস্তি সমুহের উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ২ কোটি টাকাসহ মোট ৪৫৭ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ডিপিপি ও নন-ডিপিপি সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্তি, উন্নয়ন অংশীদার অর্থায়িত প্রকল্প বিশ^ ব্যাংকের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পে ২৯ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা, বিশ^ব্যাংকের অর্থয়ানে আরবান রেজিলেন্স প্রকল্পের আওতায় ইওসি প্রকল্প খাতে ৫ লক্ষ টাকা, ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় নাগরিক বৃন্দের জীবন মান উন্নয়নে (মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা, টিকাদান, পুষ্টি সেবা) প্রকল্প খাতে ২ কোটি টাকা, সেইভ দ্যা চিলড্রেন এর আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশের নগর জনস্বাস্থ্য শক্তিশালীকরণ প্রকল্প খাতে ৬ লক্ষ টাকা, আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প খাতে ৫০ লক্ষ টাকা, এবং সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প খাতে মার্কেট নির্মাণ বাবদ প্রাপ্ত সালামী ও সিটি করপোরেশন আবাসিক প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাবদ মোট ৩৭ কোটি টাকা প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে ব্যয় ধরা হয়েছে।