বিএনপি-জামায়াতসহ গণতন্ত্র মঞ্চের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বিভাগীয় শহর রংপুরে কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্কাবস্থানে রয়েছেন। জেলার প্রবেশদ্বারসহ নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দূরপাল্লার ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক রয়েছে হালকা বাহনের চলাচল। রোববার (২৯ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ছয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত রংপুর মহানগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। হরতালের সমর্থনে বা হরতাল বিরোধী কাউকে পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। তবে নগরীতে ঝটিকা মিছিল করার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছে ছাত্রশিবিরের রংপুর মহানগর শাখা। এদিকে সকাল থেকে অনেকটাই প্রভাবহীন এ হরতালে এখন পর্যন্ত (সকাল ১০টা) স্বাভাবিক রয়েছে জীবনযাত্রা। শহরের সড়কেই সব ধরনের হালকা যানবাহন চলাচল করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের কার্যক্রমও স্বাভাবিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলো খুলতে দেখে গেছে। যাত্রী সংকটে রংপুর কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। সেই সঙ্গে কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সকাল দশটায় নগরের বিভিন্ন সড়ক হয়ে রংপুরে ঢুকে পড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো কামারপাড়া বাস স্ট্যান্ডে যেতে দেখা যায় এ ছাড়া আন্তঃজেলা রুটে বাস চলতে দেখা না গেলেও ট্রাক, মাইক্রো, অটোবাইকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো পিকেটিং দেখা যায়নি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। রংপুর মহানগর ছাড়াও উপজেলা শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদান করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাবের টহল। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমান জানান, হরতালে যাতে কেউ কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে সেজন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশের টহল অব্যাহত আছে। জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, আন্তঃজেলাসহ সব রুটেই গাড়ি চলাচল করবে। আমাদের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করেনি। তবে যাত্রী সংকট রয়েছে। রংপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, হরতালে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। এর পরও শহর ও মহাসড়কে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি। এদিকে শনিবার বিএনপি-জামায়াতসহ গণতন্ত্র মঞ্চ হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত মিছিল করেনি। তবে রোববার মিছিল করবে বলে দলটির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় হরতাল বিরোধী শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। উল্লেখ্য, বিএনপি গতকাল ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের আয়োজন করেছিল। সেই সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ার শেল ছুড়ে প- করে দিয়েছে, এমন অভিযোগ এনে রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদিকে মহাসমাবেশে পুলিশের বাধাদান ও নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীও হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। একই দিনে গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা দলগুলোও হরতাল আহ্বান করেছে।