উপকুলীয় জনপদ খুলনার কয়রা উপজেলার ৫নং কয়রা গ্রামে ১৩ বছরের আলমগীর হোসেন। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে সে অন্যর সঙ্গে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে যায়। অভাব অনটনের কারণে তার স্কুলে যাওয়া হয়নি। আজ বাবাও বেঁেচে নেই। এখন ১৩ বছরের কিশোর আলমগীর চার সদস্যের পরিবারের হাল ধরেছে। এই বয়সেই সে মাছ ও কাঁকড়া ধরায় দক্ষ হয়ে উঠেছে। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, বনদস্যু আর বাঘের ভয়কে তুচ্ছ করে সুন্দরবনে গিয়ে দক্ষতার সঙ্গে মাছ ও কাঁকড়া ধরে সে। মাছ ধরা ছাড়াও ছেড়া জাল ঠিক করতে হয় আলমগীগের স্বহস্তে। শুধু আলমগীর নয়, তার মতো শত শত শিশু সুন্দরবনে গিয়ে মাছ ধরে সংসার চালায়। কয়রা উপজেলার অসংখ্য জেলে পরিবারের এসব শিশু সংসারে সহায়তা করতে সুন্দরবনে যায় মাছ ধরতে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে এবং শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও অভাবের কারণে সব চেষ্টাই বিফল হচ্ছে। আলমগীর জানায়, সে ঠিকমতো খেলাধুলা করার সময় পায়নি। স্কুলে যাওয়ার সুযোগও হয়নি। নদী, নৌকা আর মাছ ও কাঁকড়া নিয়েই সময় কেটেছে তার। নদীতে জাল ফেলা, কৌশল করে মাছ সহ জাল টেনে তোলা এবং ছেড়া জাল মেরামত করা সব কিছুই সে শিখেছে তার বিমাতা ভাইদের কাছে। আলমগীরের বাবা মোকছেদ আলী সরদার ৭ বছর আগে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। সে জানায়, নিজে স্কুলে যেতে পারেনি, কিন্তু বোনের পুত্র তার কাছে থাকায় তাকে স্কুলে পাঠাতে চায় সে। আলমগীরের মা হালিমা খাতুন জানান, তাদের কোনো জমিজমা নেই। পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর ছোট একটি খুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। সংসার অনেক বড় হওয়ায় স্বামীর একার পক্ষে তা চালানো কঠিন ছিল। অভাব ঘোচাতে ছেলেকে দিয়ে মাছ ধরানো হয়। আলমগীরের লেখাপড়া শেখার আগ্রহ ছিল, কিন্তু অভাব অনটনের কারণে হয়নি। আর এখন আলমগীর মাছ ও কাঁকড়া ধরতে পারলেই পেটে ভাত পড়ে তাদের। স্থানীয় ইউপি সদস্য সরদার নাজমুস সাদাত বলেন, ‘সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় শিশুশ্রমের প্রচলন রয়েছে। শিশুশ্রম বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব পরিবারকে সহযোগিতার পরিকল্পনা রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ সহ সরকারি কিংবা বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে।’ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গরিব পরিবারের শিশুদের লেখাপড়ার জন্য সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। বিভিন্ন সময় বিদ্যালয় কেন্দ্রিক অভিভাবক সমাবেশ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতার মাধ্যমে ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।