সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
দুই শিশুসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ
যানবাহনে অগ্নিসংযোগ
ছাড়েনি দূরপাল্লার বাস
গত শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে 'পুলিশের হামলার প্রতিবাদে' বিএনপি আজ রোববার দিনব্যাপী হরতাল ডেকেছে। গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো বিএনপির হরতালে সমর্থন দিয়েছে। একইসাথে জামায়াতে ইসলামীও সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। এ কর্মসূচি পালনকালে বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। কোথাও কোথাও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি-জামায়াতের হরতালের কারণে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার সকালে রাজধানীর পথ-ঘাট বেশ ফাঁকা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে চলাচল ও কর্মব্যস্ততা। সকালে ঢাকার বিভিন্ন রুটগুলোতে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা ছিল সীমিত। অফিস আর জরুরি কাজে বের হয়ে সেসব গাড়িতেই ছুটতে দেখা যায় মানুষকে। সকালে দূরপাল্লার বাস না ছাড়লেও মহাখালী এলাকায় গাজীপুর-গুলিস্তান, গাজীপুর-সায়দাবাদ রুটে চলাচলকারী বলাকা ও আজমেরী গ্লোরীসহ কয়েকটি পরিবহনের দু-চারটি বাস চলতে দেখা যায়। মহাখালীতে প্রতিদিন সকালের অফিস সময়ে যানজট থাকলেও হরতালে ফাঁকা রাস্তায় ছুটতে দেখা যায় রিকশা ও অটোরিকশা। দুপুরে আগে আগে এই পথে মানুষের চলাচল বেশি দেখা যায়। খুলেছে দোকান-পাটও। মহাখালীতে অটোরিকশা চালক রফিক মোল্লা বলেন, “সকালের দিকে কিছু বাস ছিল। কিন্তু সকালে বাস পোড়ানোর পর থেকে রাস্তায় আর বাস নাই।” দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত রাজপথে হরতালের মধ্যেও বাস চলাচলের ঘোষণা দেয় ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানুন রোববারের হরতালের চিত্র:
রাজধানীত: বিএনপির ডাকা সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের দিনে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। রোববার ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত অন্তত ৪টি বাসে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘শেকড়’ পরিবহনের একটি, মোহাম্মদপুর চার রাস্তার মোড়ে ‘স্বাধীন’ পরিবহনের একটি, মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে ‘পরিস্থান’ পরিবহনের একটি ও বংশালে ‘বিহঙ্গ’ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর চার রাস্তার মোড়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা স্বাধীন পরিবহনের বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে। স্থানীয়রা জানান, এদিন ভোরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির কাছে তিন জন ব্যক্তি আসে। তাদের মধ্য থেকে একজন পেট্রোল ঢেলে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা একজনকে আটক করেছে। বর্তমানে ওই ব্যক্তি মোহাম্মদপুর থানায় রয়েছেন। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হকবিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় একজনকে আটক করা হয়েছে। তার নামণ্ডপরিচয় এখন জানতে পারিনি। অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে পরিস্থান পরিবহনের একটি বাসে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। বাসটির চালক জানান, কয়েকজন দুর্বৃত্ত চলন্ত বাসটিকে থামিয়ে সব যাত্রীদের নেমে যেতে বলে। এরপর তারা বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান। ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাজাহান শিকদারজানান, সকাল থেকে তিনটি আগুনে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে সকাল ৯টার সময় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘শেকড়’ পরিবহনের একটি গাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ করে সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট। আর সকাল ১০টার দিকে পরিস্থান পরিবহনের বাসটিতে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট পুলিশ নিরাপত্তায় আগুন নির্বাপণ করে। এছাড়াও সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁতিবাজার মোড়, বংশাল, ঢাকায় ‘বিহঙ্গ’ পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগলে সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট পুলিশ নিরাপত্তায় আগুন নির্বাপণ করে।
এছাড়া, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের মধ্যে ঢাকার ডেমরায় দাঁড় করিয়ে রাখা একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রাণ গেছে ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা চালকের সহকারীর। রোববার ভোর ৩টার দিকে ডেমরা পশ্চিম দেইল্লা পাকা রাস্তার ওপর এ ঘটনা ঘটে বলে ডেমরা থানার ওসি জহিরুল ইসলাম জানান। নিহত ওই তরুণের নাম নাঈম ওরফে নাজিম, বয়স ২০ বছর। তার সঙ্গে বাসে থাকা রবিউল নামে আরেক যুবক আগুন দগ্ধ হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা এরশাদ হোসাইন বলেন, “তারা দুজনই অছিম পরিবহন বাসের হেলপার। রাতে দুজনই বাসের ভেতর ঘুমিয়ে ছিলেন।” আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায় এবং নাঈমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আহত রবিউলকে তারাই হাসপাতালে পাঠায়। ডেমরা থানার ওসি বলেন, ‘নাঈম ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যায়। দগ্ধ রবিউলকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।” নাঈমের বাড়ি বরিশালের কোতোয়ালি থানা এলাকায়। ঢাকায় তিনি ডেমরা হাজিনগর এলাকায় থাকতেন।
গাজীপুর: গাজীপুরের টঙ্গীতে বিআরটিসি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চেরাগআলী মার্কেটের সামনে ঢাকাগামী বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে অগ্নিসংযোগ করে। স্থানীয়রা জানান, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল চলাকালে টঙ্গীর চেরাগআলী মার্কেটের সামনে কে বা কারা ঢাকাগামী বিআরটিসির একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ব-১৫- ৫৩৯৮) আগুন দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও বাসের কিছু অংশ পুড়ে যায়। বাসটি সেখানে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিল। ঘটনার পর তাৎক্ষণিক স্থানীয় সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাসে তিন-চারজন যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছেন চালক। এরমধ্য থেকে হয়তো কেউ আগুন দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরআগে, গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থানা এলাকায় একটি মিটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে চারটি বাসে ভাঙচুর, জৈনাবাজার এলাকায় ও বেড়াইদেরচালা ১নম্বর সিঅ্যান্ডবি এলাকায় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে হরতালের সমর্থনকারীরা। রোববার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হরতালের সমর্থনে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থানায় এলাকায় মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিটি ট্রাকে আগুন দেয় হরতালকারীরা। পরে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে মিনি ট্রাকের আগুন নেভায়। অন্যদিকে মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় চারটি বাসে ভাঙচুর করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা।
রাজশাহী: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল চলাকালে রাজশাহীর বাঘায় ট্রাফিক সার্জেন্টের ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার আটঘরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ট্রাফিক সার্জেন্টের নাম শহিদুজ্জামান। তিনি রাজশাহী মহানগরে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রেষণে রয়েছেন। তাঁর বাড়ি চারঘাট উপজেলার সরদহ কুটিপাড়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাফিক সার্জেন্ট শহিদুজ্জামান নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে তাঁর স্ত্রীর বোনকে বাঘায় রাখতে যাচ্ছিলেন। তিনি যখন বাঘা উপজেলার আটঘরিয়া মোড়ে পৌঁছান, তখন একদল পিকেটার লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁর গাড়ির গতি রোধ করে। তিনি গাড়ি থামালে তারা লাঠি নিয়ে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় তারা আত্মরক্ষার্থে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফাতেমা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, বিকট একটা শব্দ পেয়ে তিনি বাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে এসে দেখেন, গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। খবর পেয়ে বাঘা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সবুজ রানা জানিয়েছেন, ঘটনা তদন্তের পর বলা যাবে-কারা এ অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
খুলনা: খুলনা মহানগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে কার্যালয়ের সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। রোববার দুপুরে নগরীর খালিশপুর থানার বৈকালী এলাকার অফিসে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে এ অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক জহর মীর বলেন, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে না থাকায় আগুন নেভানোর কেউ ছিল না, ফলে সবকিছু পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস খুলনার সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে বয়রা স্টেশনের কর্মী সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে সেখানে যাওয়ার আগেই প্রায় সবকিছু পুড়ে গেছে।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের তিন উপজেলায় ৬টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় যানবাহন আগুনে পুড়ে গেলেও কেউ হতাহত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও র্যাব বাড়তি টহল বাড়িয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার মধ্যরাতে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের মানরা এলাকায় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ভোরের দিকে সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তরা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও বাসে অধিকাংশ অংশ পুড়ে যায়।
এ ছাড়া, মানিকগঞ্জ-হরিরামপুর আঞ্চলিক সড়কের উভাজানী এলাকায় একটি সিএনজিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় যানবাহনের ক্ষতি হলেও কেউ হতাহত হননি। এদিকে, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও শহর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যানবাহন ও যাত্রী চলাচল কম করছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস তেমন নেই। তবে আঞ্চলিক সড়কে লেগুনা, সিএনজিতে যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের হার অনেক কম। মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তরা এলাকায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বগুড়া: বগুড়া সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষে দুই শিশুসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া হরতাল সমর্থকদের হামলায় সাংবাদিক ও পুলিশসহ আরও আটজন আহত হয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীনের গাড়ি ভাঙচুরের পর রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বাঘোপাড়া খোলারঘরে এ সংঘর্ষ ঘটে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে বগুড়া সদর উপজেলার বাঘোপাড়া খোলারঘরে আবদুর রবের ছেলে মহিউদ্দিন মাহি (৮), মাকসুদুরের ছেলে আওলাদের (১৫) নাম জানা যায়। বাকি পাঁচজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এদের মধ্যে শিশু মাহি বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। পিকেটারদের হামলায় আহত তিন সাংবাদিক হলেন- দৈনিক করতোয়ার মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার রাহাত রুপান্তর, দৈনিক জয়যুগান্তরের সাব্বির শাকিল ও এনসিএন নামে এক অনলাইন নিউজ পোর্টালের রিপোর্টার ববিন রহমান। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত ডিবি পুলিশের দুই সদস্য হলেন- ইসমাইল ও মোস্তাফিজুর। তারা সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সিলেট: হরতাল চলাকালে সিলেটের জিন্দাবাজারে পিকেটারদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় তিনজনকে আটক করে পুলিশ। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তিনজনকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানাতে পারেননি কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ। তিনি জানান, রোববার সকালে জিন্দাবাজার এলাকায় ঝটিকা মিছিল থেকে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে সরিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকালে জিন্দাবাজার এলাকার কাজি ইলিয়াস ও তাঁতিপাড়ার গলি থেকে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী হঠাৎ মিছিল নিয়ে বের হয়ে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এরপর পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া একটি মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করে। এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে সিলেটে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভোর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সকল রাস্তা ও মোড়ে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরিবহন শ্রমিকরা বাস চালু রাখার ঘোষণা দিলেও সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। তবে আঞ্চলিক সড়কগুলোকে কিছুটা যানবাহন চলাচল করছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বলেন, 'সিলেটের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা মাঠে রয়েছি। হরতালকে কেন্দ্র করে কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে আমরা কঠোরভাবে তা দমন করবো।'
কুমিল্লায়: হরতাল প্রতিহত করতে এসে কুমিল্লায় যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হয়েছেন ছয়জন। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর চকবাজার ফয়সাল হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হরতাল প্রতিহত করতে এসে যুবলীগের দুই গ্রুপ প্রথমে হাতাহাতিতে জড়ায়। এ সময় রামদা, লাঠি, বেসবলের স্টিক নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। সংঘর্ষে দুই গ্রুপের ছয়জন আহত হন। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন বলেন, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
মৌলভীবাজার: হরতালে মাঠে নেই মৌলভীবাজার বিএনপি, ছেড়ে যাচ্ছেনা কোন দূরপাল্লার বাস। তবে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের পাশাপাশি সরব উপস্থিতি রয়েছে সরকার পন্থীদের। মৌলভীবাজারের চৌমুহনীতে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছে জেলা যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো। স্বল্প কিছু রিক্সা আর ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে শহরজুড়ে। জেলার অনান্য উপজেলার একই চিত্র। শহরের কোদালিপুর এলাকায় বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ। এমনকি সিলেটগামী বাসগুলোও বন্ধ আছে। তবে হরতাল ডাকলেও শহরের কোথাও দেখা যায়নি বিএনপি সমর্থকদের।
দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ দলটির ৩৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সদর থানায় চারজন, ঘোড়াঘাটে নয়জন, বিরামপুরে ১২ জন, বিরলে দুজন, কাহারোলে একজন, চিরিরবন্দর তিনজন, পার্বতীপুরে দুজন, বীরগঞ্জে দুজন ও নবাবগঞ্জে তিনজনসহ মোট ৩৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান ও বিরল উপজেলা যুবদল নেতা নুরুজ্জামান রয়েছেন। বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে রোববার সকালে শহরের জেল রোডে অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে দুলালকে আটক করা হয়। এদিকে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, বিরল উপজেলা যুবদল নেতা নুরুজ্জামানকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। হরতালের ডাক দিলেও দিনাজপুরে কোনো দলের নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দিনাজপুরের কোথায় কোনো দলের মিছিল কিংবা পিকেটিং চোখে পড়েনি।
ঝালকাঠি: সকালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে ঝালকাঠিতে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি। খবর পেয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীরা সদস্য সচিবের বাসায় হামলা করেন। ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় জেলা বিএনপি সদস্য সচিবের বাসা থেকে সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়ের হোসেন, বিএনপি পন্থী আইনজীবী তুষার, প্রচার সেল কর্মী আরিফকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে চার উপজেলার আরও ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। হরতালে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস এবং অন্যান্য যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। ভোর থেকে মহাসড়কে বরিশাল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৮ এর একাধিক টিম টহল দিয়েছে। জেলা শহরসহ অন্যান্য শহর ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন ছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: হরতালকে সামনে রেখে গত শনিবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৫ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় আটটি ককটেল ও ১০০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করা হয়। এদিকে হরতালের কারণে জেলা শহরের প্রধান প্রধান মার্কেটসহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। মহাসড়কে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার কোনো বাস, ট্রাক বা অন্যান্য বড় যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। ভটভটি, নসিমন, করিমন, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করেছে যথারীতি। তবে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক ছেড়ে যায়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল দিয়েছে রাস্তায় রাস্তায়।
নাটোর: নাটোরে নাশকতার চেষ্টাসহ এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অভিযোগে এক জামায়াত নেতাসহ বিএনপির ৩৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। হরতাল ছিল নিরুত্তাপ। লালমনিরহাট: সন্ধ্যায় শহরের প্রাণ কেন্দ্র মিশন মোড়ে অবস্থিত লালমনিরহাট জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় ‘হামার বাড়ি’তে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শ্রমিক নেতার মৃত্যুর খবরে ফুঁসে উঠেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর জের ধরে সন্ধ্যায় এ হামলা করা হয়। হরতালে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর রেলগেট এলাকায় সকালে শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলা চালান বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে চারজন আহত হন। আহতদের একজন লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মারা যান।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান আওয়ামী লীগ নেতারা। হরতালকে কেন্দ্র করে জেলায় পৃথক ঘটনায় ছয়জন আহত হয়েছেন।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হচ্চে। জেলার নয়টি উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। সকাল ৮টার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার একটি সড়কে গাছের গুঁডি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেন হরতাল সমর্থকরা। দুপুর সোয়া ১টার দিকে জেলা শহর মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে বিএনপির ১৫-২০ জন নেতাকর্মী হরতালের সমর্থনে ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তারা সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। জেলা বিএনপি অভিযোগ করেছেন, তাদের ২৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।
সাতক্ষীরা: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালেও সাতক্ষীরার জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। বিএনপির কোনো মিছিল বা পিকেটিং চোখে পড়েনি। অন্যদিকে সাতক্ষীরায় হরতালবিরোধী শান্তি মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি হরতালের। শহরের ভেতরে ও জেলা সদর থেকে উপজেলার যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকলেও আন্তঃজেলা যোগাযোগ বন্ধ ছিল। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়ে নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে শহরে বিএনপির কোনো মিছিল বা পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে ১০টায় কলাবাগানের ভাঙ্গাব্রিজ মোড়ে বিএনপির কয়েকজন কর্মী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশের তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।