ভারতের রাজধানী দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার লক্ষণ তো নেই, উল্টো দূষণের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত রোববার সকালে দিল্লির বাতাসের গুণগত মান ছিল (একিউআই) ৪৬০। আজ সোমবার সকালে সেই মাত্রা ছুঁয়েছে ৪৮৮। সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি দিল্লির আরকে পুরম, পতপরগঞ্জ এবং নিউ মোতি বাগ এলাকায়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দূষণের মাত্রা কমানোর উপায় খুঁজতে সোমবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসতে চলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। দুপুর ১২টা থেকে এই বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল। বৈঠকে থাকবেন দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই-ও।
এদিকে, বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু তার আগে দু’দলের অনুশীলনেই বাগড়া দিয়েছে বায়ুদূষণ। কিন্তু তার আগে ভারতীয় রাজধানীতে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে বায়ুদূষণ। দিল্লির বিষাক্ত বাতাসের কারণে গত শুক্রবার অনুশীলন বাতিল করেছে সাকিব আল হাসানের দল। শনিবার একই ঘোষণা দেয় শ্রীলঙ্কাও।
টানা পাঁচ দিন ধরে দিল্লির বাতাসের গুণগত মান ‘অত্যন্ত ভয়ানক’ পর্যায়ে রয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে দিল্লিবাসীদের। পরিবেশবিদেরা বলছেন, দিল্লিতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে শুধু মানুষের উপরই প্রভাব পড়ছে না, পশুপাখিদের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
শহরের এক পশু চিকিৎসক জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ ধরা পড়েছে এমন ১০টি পাখিকে চিকিৎসা করেছেন তিনি। দিল্লি পুরনিগম জানিয়েছে, দূষণ পরিস্থিতি সামলাতে ৫১৭টি নজরদারি দল গঠন করা হয়েছে। ১,১১৯ জন আধিকারিককে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তায় জল ছেটানো হচ্ছে। স্মগ গান দিয়ে ধোঁয়াশা কাটানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দূষণ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে এমন এলাকাগুলিতে জল ছেটানো হচ্ছে।
কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ পর্যায় এমনকি অত্যন্ত ভয়ানক পর্যায় গিয়ে ঠেকেছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও।
একিউআই ৪৫০ ছাড়ালে তখন দূষণের মাত্রা ‘অতি ভয়ানক’ বলে ধরা হয়। দূষণ রুখতে কেন্দ্রের কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট কিছু পদক্ষেপের খসড়া তৈরি করেছে। তাকেই বলা হচ্ছে ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’। দূষণ রুখতে জিআরএপি অর্থাৎ ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’-এর চতুর্থ পর্যায়ে যে পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় তা কার্যকর করার নির্দেশ দিল কেন্দ্র। সরকারি এবং বেসরকারি দপ্তরগুলিকে কেন্দ্রের নির্দেশ, এখন থেকে ৫০ শতাংশ কর্মী অফিসে বসে কাজ করবেন। বাকি ৫০ শতাংশ বাড়ি থেকে কাজ করবেন।
এর পাশাপাশি, দূষণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় প্রাথমিক স্কুলগুলি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এর আগে কেবল ৩ এবং ৪ নভেম্বর রাজধানীর সমস্ত প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস হবে বলে জানানো হয়েছে। ওই ক্লাসগুলি অনলাইনে করার বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী আতিশী মারলেনা।
দিল্লির দূষণের জন্য প্রতি বারই অভিযোগের আঙুল ওঠে শস্যের গোড়া পোড়ানোর রেওয়াজের দিকে। শীতের মরসুম এলেই শস্যের গোড়া পোড়ানোর কাজ শুরু হয়ে যায় দিল্লি সংলগ্ন পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশে।এ বারও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু এ বার শস্যের গোড়া পোড়ানোর বিষয়ে অনেকটাই সতর্ক দিল্লির এই প্রতিবেশী রাজ্যগুলি। কিন্তু তার পরেও রাজ্যের কোথাও কোথাও শস্যের গোড়া পোড়ানোর কাজ চলছে।