দীর্ঘ চার যুগেরও অধিক সময় পর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের (সরাইল-আশুগঞ্জ) আওয়ামী লীগের। কেটেছে দলটির পরাজিত হওয়ার বন্ধাত্ব। আর সেটি হয়েছে বেসরকারী শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু’র হাত ধরেই। প্রায় ৫০ বছর ধরে হারিয়ে যাওয়া নৌকাকে তিনি উপরে তুলে ধরেছেন। ‘এই আসনটি নৌকার নয়, ধানের শীষের’-এমন উক্তিকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছেন। গত ৫ নভেম্বরের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে দলকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন সাজু। ওঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মৃধা পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট। দলীয় ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনের পর এই আসনে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন তাহের উদ্দিন ঠাকুর। এরপর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৫০টি বছর এখানে নৌকা জয়ের মুখ দেখেনি। এমনকি গত ২২ বছর ধরে এখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীই দেয়া হয়নি। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন মেজর (অব:) জহিরূল ইসলাম। ১৯৯৬ ও ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে পরপর দুইবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম। এরপর এই আসনে আর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় জোট মহাজোটের প্রার্থীকে। সদ্য সমাপ্ত উপনির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পান অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। যদিও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি। ১৬ মনোনয়ন প্রত্যাশীর ২/৩ জন নৌকার পক্ষে মাঠে কাজ করেননি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন পাঁচ প্রার্থী। দলীয় ও সাধারণ ভোটারদের চোখে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন আ.লীগের শাহজাহান আলম সাজু (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা (কলারছড়া)। বর্তমানে জাতীয় পার্টির রওশন পন্থী নেতা মৃধা এই আসনে মহাজোটের মনোনয়নে পরপর দুইবার এমপি হয়েছিলেন। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে মৃধা সাথেই প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয় সাজুর। সর্বশেষ শাহজাহান আলম সাজু ২৮ হাজার ৭৫৭ ভোটের ব্যবধানে মৃধাকে পরাজিত করে নৌকার জয় নিশ্চিত করেছেন। শুকুর আদায় করে হাঁসছেন সাজু। হাঁসছেন আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ৫০ বছর পর এখানে নৌকা জয়ের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হওয়ায় মন খুলে হাঁসছেন দলটির তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। সকলের প্রত্যাশা নৌকার হাত ধরেই নতুন ভাবে এগিয়ে যাবে সরাইল আশুগঞ্জের উন্নয়ন।