আমার চেয়ে বহুগুন মেধাবীকে জানি, যিনি চাকুরি পাওয়ার আগেই চাকুরির বয়সসীমা শেষ করে ফেলেছেন। ঢের বেশি মেধাবীকে চিনি, যিনি তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি জোগাড় করতে পারেননি। এমনও অনেকের সাথে আলাপ হয়েছে, যারা গতবাধা অফিস টাইমের কারণে এবং বসদের হুকুম তামিলে অপারগ ভেবে কখনোই চাকুরির পিছনে ছোটেনি। আবার এমনও অনেককে দেখেছি, যারা বহু ক্ষমতাধর পদবী ত্যাগ করে নিরীহ-গোছের কাজে নিজেকে অভ্যস্থ করে নিয়েছেন। আসলে যে যেমনভাবে জীবন উপভোগ করতে চায় তার সেভাবেই জীবনকে ভালোবাসা উচিত। ব্যক্তি মাত্রই তার স্বতন্ত্র পছন্দণ্ডরুচি বিদ্যমান থাকবে। তাইতো প্রত্যেকের উচিত অন্যান্যের উৎসাহিত করা, পেশার সম্মান করা এবং মানুষ হিসেবে ভালোবাসা বিলিয়ে দেয়া। আমার চেয়ার বড়, অফিসের বস, বড় চাকুরি করি এসব ভেবে নিজেকে কী হনুরে ভাবতেই পারি, তবে তখন আর নিজে মানুষ থাকি না। অহংকার কোনদিন মানুষের জন্য সম্মান আনেনি; সাধারণ মানুষের ভীতি থেকে সাময়িক ভয় মেশানো শ্রদ্ধা আনতে পারে। কিন্তু একটু আড়াল হতেই যে কুৎসিত গালি মানুষের থেকে উগড়ে আসে তা শোনার আগে নিজেকে বদলানো উচিত। মানুষের ঘৃণা বরাদ্ধ হয় এমন আত্ম-অহমিকা পরিত্যাজ্য হোক। অথচ বিনয়? আপনাকে কখনোই ছোট করবে না বরং কত উঁচুতে যে আপনাকে তুলবে তা আপনি আন্দাজও করতে পারবেন না। মানুষের মনে স্থান পাওয়ার থেকে এই জগতে দ্বিতীয় কোন বড় অর্জন নাই। এখানে অনেকের দেখা মেলে যারা সম্মানের পদ পেয়ে অতীত ভুলে যান। মানুষের সাথে আর মানুষের মত আচরণ করতে চান না। বন্ধু-বান্ধবের সামনে অচেনা চেহারায় দাঁড়ান। আপনার আসন থেকে আপনার চারপাশে যাদেরকে দেখেন তাদেরকে খুব ছোট মানুষ মনে করেন! অথচ আপনার চারপাশে এমন হাজারো মানুষ থাকে যারা মানুষ হিসেবে আপনার চেয়ে বহুগুন বড়; আপনি বড়জোর ২৫/৩০ বছর কার্যকালের জন্য অফিসার হিসেবে বড়ত্ব দেখাতে পারবেন। তারপর ক্ষমতা সংকুচিত হতে হতে বন্ধ হবে এবং শেষমেষ আপনাকেও সাধারণের পর্যায়ে এসে আবার আরেক অফিসারের দ্বারা পদানত হতে হবে। ন্যাচারাল জাস্টিস কখনোই বিট্রে করে না। আপনি যা দিবেন, ঘুরেফিরে তাই পাবেন। অনুরোধ থাকবে, যতোটা পারি বিনয়ী হবো। নিজেকে কর্মকর্তা নয় বরং সেবক ভাবতে শিখবো। মনে রাখবো, এই কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থেই আমার জীবন ও জীবিকার সংকুলান হচ্ছে। কখনো মাথা বিক্রি করা তথা নীতি-আদর্শ থেকে যেনো বিচ্যুত না হই। নুইয়ে পড়ার চাইতে বিনাশ হওয়া অনেক বেশি সম্মানের। পরীক্ষার দিনে শুধু একটু জ্বরের কারণে আমার পরীক্ষা খারাপ হতে পারতো এবং চাকুরি নাও পেতে পারতাম। ভাইভা বোর্ডে আমার কোন এক আচরণের খুঁত যদি স্যারদের চোখে লাগত তবে রেজাল্টের সাথে আমি ছিটকে যেতে পারতাম। সব কঠিন কঠিন ধাপ উৎরে যা পেয়েছি তা যেনো বিবেকের আদলতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করি৷ শুধু চেষ্টা দিয়ে চাকুরি হয় না। বাবা-মায়ের দোয়া, ভাগ্য আর বন্ধু-স্বজনের ভালোবাসাও দরকার হয়। এসব অনুকূলে ছিলো বলেই আজ লোকিক সফল মানুষ হিসেবে পরিচয় জুটেছে। যদি ধারণ করতে পারি তবে সফলতা পূর্ণতা পাবে আর যদি বিপথগামী হই তবে ধ্বংস অনিবার্য। মানুষ হিসেবে যেনো মানুষের মূল্যায়ন করি। বিনয়ী হই এবং কাজকে ভালোবাসি। (রাজু আহমেদ, কলামিস্ট)