অনেক মানুষ আছে যারা চব্বিশ ঘণ্টা খেটে বা ব্যবসা করে
সংসার চালাতে হিমসিম খায়, সেখানে শেরপুরের চাঁন মিয়া নামে এক শারীরিক
প্রতিবন্ধী মাত্র দুই ঘণ্টা ব্যবসা করে দিব্যি সংসার চালাচ্ছেন। ঘটনাটি
অনেকের বিশ্বাস হতে না চাইলেও আসলে বাস্তব এ ঘটনাটি শেরপুর জেলার
শ্রীবর্দী উপজেলার ঝগড়ার চর বাজারের।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, এ বাজারের পাশের গ্রাম ডাকরা পাড়া গ্রামের
শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. চাঁন মিয়া প্রায় ৪৩ বছর যাবত ছোলা-বুট ও খেশারি
ডালের পেঁয়াজু তৈরি করে ব্যবসা করে আসছেন।
একসময় তিনি সারাদিন ব্যবসা করে আসলেও সম্প্রতি বয়স হওয়ার কারণে সারাদিন
ব্যবসা না করে মাত্র দুই ঘণ্টা ব্যবসা করেন তিনি। ওই দুই ঘণ্টার মধ্যে সে
তার সকল ছোলা-বুট ও পেঁয়াজু শেষ হয়ে যায়। প্রতিদিন বিকেল থেকে ৫ কেজি ডাল
ও ৫ কেজি ছোলা-বুট তৈরি করে রাখেন এবং সন্ধ্যায় মাগরিবের আজানের পর পরই
তার রান্না করা ছোলা-বুট আর গরম গরম পেঁয়াজু তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে
বাজারের লোকজন এসে লাইনে দাঁড়িয়ে কিনে নিয়ে যায়। আর এ পেঁয়াজু ও ছোলা-বুট
শেষ হয়ে যায় এশার আযান দেওয়ার সাথে সাথেই। অনেক সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয়রা
প্রতিদিন ভিড় করে ওই দোকানে।
চাঁন মিয়ার তৈরি ছোলা-বুট ও পেঁয়াজু খুবই সুস্বাদু হওয়ায় জেলার সর্বত্র
এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে জেলা শহর থেকে এবং শেরপুর-জামালপুর সড়কে
চলাচলরত মানুষ এ পেঁয়াজু খেতে আসছে প্রতিদিন। ছোট্ট একটি দোকানে ১০ থেকে
১২ জনের বেশি মানুষের বসার ব্যবস্থা না থাকলেও অনেকেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে
থেকে অপেক্ষা করেন ওই বুট-পেঁয়াজু খেতে। তবে শনি ও বুধবার ওই বাজারে হাট
বসায় সেদিন ছোলা-বুট ও পেঁয়াজুর চাহিদা আরও বেড়ে যায়।
ফলে ওই দিন বুট-পেঁয়াজু প্রায় ডবল তৈনি করে থাকেন। শহরে যে পেঁয়াজু ৫
টাকা থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয় সেই পেঁয়াজু এখানে মাত্র দুই টাকায় পাওয়া
যায়। ফলে ধনি-গরিব সবাই একবার হলেও এ পেঁয়াজু খেতে আসে। চাঁন মিয়ার ছোলা
বুট ও পেঁয়াজু যা বিক্রি হয় তার অর্ধেকই বিভিন্ন ক্রেতা তাদের বাড়ির জন্য
পারসেল নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে চাঁন মিয়া জানায়, একসময় তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা
পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ কেজির বুট-পেঁয়াজু বিক্রি করতো। কিন্তু এখন বয়সের
ভারে সারাদিন ব্যবসা করতে পারে না। তাই সে এখন মাত্র দুই ঘণ্টায় প্রায়
৮-৫ হাজার টাকা বিক্রি করেই সংসার চলে যায়। তবে এ ব্যবসা করে তিনি
ইতোমধ্যে তার দুই মেয়ে ও দুই ছেলের বিয়ে দেওয়াসহ জমিজমা এবং বাড়িঘরও
করেছেন।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন ভালো ও মানসম্পন্ন খাবারের দোকান দিলে সারা
দিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বেঁচা-বিক্রির প্রয়োজন নেই। গুণগত মানেই যে
কেউ প্রতিষ্ঠা পেতে পারে, যা চাঁন মিয়া তার দৃষ্টান্ত।