দিঘলিয়ায় সংঘবদ্ধ দস্যু চক্রের অপতৎপরতায় শান্তিপ্রিয় মানুষের কাটছে নির্ঘুম রজনি। আইন শৃঙ্খলায় অবনতিতে মানুষ শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসী দস্যু চক্রের নানা দুঃসাহসিক অপতৎপরতা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতের আঁধারে বিভিন্ন বাড়িতে গ্রীল কেটে ঘরে ঢুকে চোরের বেশে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিস পত্র নিয়ে অবাধে পালিয়ে যাচ্ছে। এ দস্যু চক্র গত বছরের দিকে দিঘলিয়া উপজেলার ফাতেমা মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ্রীল কেটে ১৭ টা ল্যাপটপ চুরি করে নিয়ে গেলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো সংস্থাই চোর চক্রকে গ্রেপ্তার ও চোরাই মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি। চলতি বছরের আগস্ট মাসে দিঘলিয়ার শহীদ মোড়লের ও শেখ শামীমুল ইসলামের বাড়ির গ্রীল কেটে ঘরে ঢুকে দস্যুচক্র। শহীদ মোড়লের বাড়ি থেকে ডলার ও নগদ টাকা নিয়ে অবাধে পালিয়ে যায়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর দিঘলিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমজাজ শিরিন ময়না ও দিঘলিয়া উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আল মামুনের দিঘলিয়া গ্রামে নিজস্ব বাড়িতে গেটের তালা কেটে দস্যু চক্র ঘরে ঢুকে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ ১৬ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে অবাধে পালিয়ে যায়। ঘটনার ৬০ দিন গত হলেও দিঘলিয়া থানা পুলিশ সুনির্দিষ্টভাবে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও মালামাল উদ্ধার সফল হতে পারেনি। যদিও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
এদিকে দিঘলিয়ার সেনহাটি ইউনিয়নের কাটানিপাড়া নিবাসী সাংবাদিক ডাঃ সৈয়দ আবুল কাসেমের বাড়িতে থাকা ইজিবাইকের ৪টা ব্যাটারী ও লাইট খুলে নিয়ে অবাধে পালিয়ে যায় দস্যুচক্র। দিঘলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করার পরও আসামি গ্রেপ্তার ও চোরাই মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি দিঘলিয়া থানা পুলিশ।
অপরাধী চক্র নিভৃত হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো বাড়িতে চড়াও ও গ্রীল কেটে ঘরে ঢুকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল চুরি করে নিয়ে অবাধে পালিয়ে যাচ্ছে। পাহারা দিয়েও তাদের নিবৃত করা যাচ্ছেনা এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
অতি সম্প্রতি এ নৈশ দস্যুচক্র ব্রহ্মগাতী গ্রমের মৃত আবুল বাসার শেখের পুত্র ইসমাইল শেখের বাড়ি, মোয়াজ্জেম শেখের পুত্র কায়ুম শেখের বাড়ি, শেখ আলাউদ্দিনের পুত্র সাইমুন মনিরের বাড়ি, আর আর এফ ও ব্রাক এনজিও অফিস, দিঘলিয়ার মৃত শরীফ শেখের পুত্র রেজাউল শেখের বাড়ি ও কুদ্দুস বিশ্বাসের পুত্র জুয়েল বিশ্বাসের বাড়ি, শহিদ মোড়লের বাড়ি ২য় বার, মসজিদের ইমাম ইমদাদ উল্লাহর বাড়িতে চড়াও হয়েছে। গ্রীল কেটে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে অবাধে পালিয়ে গেছে। কোনো কোনো বাড়িতে ঘরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে রাম দা হাতে এবং পিস্তলের গুলিতে হত্যার হুমকি দিয়েছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে দিঘলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। ভুক্তভোগী মহল অনতিবিলম্বে এ সক্সঘবদ্ধ অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও চোরাই টাকাসহ মালামাল উদ্ধারের জন্য দিঘলিয়া থানা পুলিশসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি করেছেন।
দিঘলিয়া উপজেলার ব্রহ্মগাতী নিবাসী ও দিঘলিয়া থানার নিকটবর্তী এলাকার সাইমুন মনির এ প্রতিবেদককে জানান আামার বাড়িতে রাত সোয়া ২ টার দিকে দুর্বৃত্তরা ঢুকে গ্রীল কাটতে শুরু করলে শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন লাইট জ্বালিয়ে বাইরে এলে দেখি ৩ জন আমার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চিৎকার দিলে এগিয়ে এসে বড় ধারালো রামদা এগিয়ে ধরে বলে রিভলবারের গুলি করে মেরে ফেলব। এ সময় আমার স্ত্রী ঘর থেকে দা নিয়ে আমার হাতে দিলে তারা আমাকে পুণরায় হুমকি দিয়ে আমার বাড়ি থেকে চলে যায়।
দিঘলিয়া উপজেলার সামনের আনিস শেখের পুত্র বিয়াল শেখ এ প্রতিবেদককে জানান, গত সোমবার রাত সাড়ে ৩ টার দিকে আমাদের বাড়িতে হাফ ট্রাউজার পরা ৩ জন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত গ্রীল কেটে ঘরে ঢুকার জন্য আাসে। এ সময় আমার পিতা আনিস শেখ পেশাব করার জন্য বাইরে আসে এবং ৩ জনকে দেখতে পায়। এ সময় আমার পিতা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে প্রশ্ন করলে তারা বড় রামদা উঠিয়ে এগিয়ে আসে। এ সময় আমার পিতা আনিস শেখ ঘরে ঢুকে চিৎকার দিলে আমি দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। আমি তাদের উদ্দেশ্যে কথা বললে তারা দ্রুত হুমকি দিয়ে চলে যায়। তিনি আরো জানান দিঘলিয়ায় ঐ রাতে ৪বাড়িতে হানা দিয়েছে। এর আগে দিঘলিয়া, ব্রহ্মগাতী, পানিগাতী, মহেস্বরপুরসহ কয়েকটি গ্রামে শতাধিক বাড়িতে এ দস্যু চক্র হানা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী মহল এ প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে তাদের কাটছে নির্ঘুম রজনি। তাদের আতঙ্ক কখন ঘটে এ অপ্রতিরোধ্য দুরবৃত্তের হাতে জীবনহানী!
এ ব্যাপারে কথা হয় দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ রিপন কুমার সরকারের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা আমলে নিয়ে অপরাধীদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে আসামীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। কেউ কেউ জামিনে চলেও এসেছে।