“তোমার বাপ আমার বিচার মানেনি, তাই তোমার নাগরিক অধিকার আমি দেবো না, পারলে আমার নামে মামলা করো। নাগরিক অধিকার ওইটা (বেত দেখিয়ে) দেবো যে। এই বলে এক কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এ সময় চেয়ারম্যান ওই ছাত্রকে উদ্দেশ্যে করে অশ্লীল গালমন্দও করেন। বৃহষ্পতিবার, ৯ নভেম্বর বেলা ১ টার দিকে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটান ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো।
জানা গেছে, চেয়ারম্যানের মারধরে আহত তৌহিদুল ইসলাম (২০) জন্মবিন্ধন সনদ নেয়ার জন্য পরিষদের গিয়ে এ হামলার শিকার হন। তৌহিদুল ইসলাম রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের আমতলিয়াপাড়া গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে এবং রামু সরকারি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র।
হামলাকার শিকার তৌহিদুল ইসলামের মা খুরশিদা বেগম জানান- ১৫ দিন পূর্বে ছেলেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ জন্মনিবন্ধন সনদ নেয়ার জন্য ছেলেকে (তৌহিদ) পরিষদে পাঠান। কিন্তু বেশ কয়েক বার বিভিন্ন অজুহাতে ছেলেকে জন্মনিবন্ধন করার সুযোগ না দিয়ে ফেরত পাঠান। গত বুধবার, ৮ নভেম্বর আবারো জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহের জন্য গেলে চেয়ারম্যান ছেলের সকল কাগজপত্র নিয়ে রেখে দেয় এবং পরদিন যেতে বলে। চেয়ারম্যানের কথা অনুযায়ী পরদিন বৃহষ্পতিবার, ৯ নভেম্বর পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান ছেলের পরিচয় জানতে চান। এ সময় পিতার না বলার সাথে চেয়ারম্যান চরম উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল গালমন্দ শুরু করে এবং একপর্যায়ে চৌকিদারকে দিয়ে বেত এনে ছেলে পিটাতে শুরু করে। মারধরের একপর্যায়ে ছেলে মেঝেতে পড়ে গেলে চেয়ারম্যান ছেলে তৌহিদের কোমরেও পা দিয়ে আঘাত করে। পরে তৌহিদের সাথে থাকা তারেকুল ইসলাম, ফাইসাল ও আবদুল হক নামের ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
চেয়ারম্যানের উত্তেজিত হওয়া, গালমন্দ করা ও মারধরের একটি অডিও রেকর্ডও এ প্রতিবেদকের কাছে দিয়েছেন হামলার শিকার তৌহিদের মা খুরশিদা বেগম। ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের এ অডিও রেকর্ডে খুরশিদা বেগমের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।
তৌহিদের মা আরও জানান- বিষয়টি তিনি বৃহষ্পতিবার, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফাকে অবহিত করেন। এ সময় ইউএনও রামু থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর রাতে তিনি এ ঘটনায় রামু থানায় লিখিত এজাহার দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো জানান, এক ছেলে এসে আমাকে জন্মনিবন্ধন দেয়ার জন্য তড়িঘড়ি করছিল। আমি ঐ সময় ব্যস্ততার কারণে অপারগতা প্রকাশ করলে সে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তবে আমি কাউকে মারধর করিনি। যে ছেলে এসেছে তার বাবা এবং পুরো পরিবার এলাকার নামকরা খারাপ মানুষ।
জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। অভিযোগটি অবশ্যই গুরুতর। তিনি নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নিবেন বলেন জানান।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান- তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরের ডিউটিতে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।