ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাঁচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের। আজ শনিবার রাজধানীর বেসরকারি বিআরবি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরআগে, চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছিল। পরে দেশে আসার পর রাজধানীর পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
জবিতে ৩ দিনের শোক: উপাঁচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের মৃত্যুতে থেকে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন আহমেদ শনি, রোব ও সোমবার এ তিন দিন শোক ঘোষণা করেন। এ তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ২০২১ সালের ১ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাঁচার্য পদে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ডিন ড. ইমদাদুল হক। অধ্যাপক ইমদাদুল হক একজন বাংলাদেশি উদ্ভিদবিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাঁচার্য। তিনি ২০২১ সালের ১ জুন চার বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাঁচার্য পদে নিয়োগ পান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাঁচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হন। অধ্যাপক ইমদাদুল হকের জন্ম পাবনা জেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৭৮ সালে এমএসসি ও ১৯৮৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি একাধিক পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ঢাবির জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও সদস্য, বাংলাদেশ উদ্ভিদবিজ্ঞান সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্ল্যান্ট টিস্যু কালচার অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাধিক পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবেও ভূমিকা রেখেছেন। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জার্নালে তার ৮০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি একাধিক বইয়ের সহ-সম্পাদক।
ইউজিসি চেয়ারম্যানের শোক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাঁচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। শোক বার্তায় ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর আলমগীর বলেন, প্রফেসর ইমদাদুল হক একজন বিশিষ্ট উদ্ভিদবিজ্ঞানী, দক্ষ প্রশাসক ও সংগঠক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাঁচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ঢাবির জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও সদস্য, বাংলাদেশ উদ্ভিদবিজ্ঞান সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্ল্যান্ট টিস্যু কালচার অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শুরু করেন। তার মৃত্যুতে জাঁতি একজন বিশিষ্ট শিক্ষক ও অভিভাবককে হারালো। এ গবেষকের মৃত্যু দেশ, জাতি, শিক্ষা পরিবারের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। প্রফেসর আলমগীর মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
ঢাবি উপাঁচার্যের শোক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাঁচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাঁচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ শোক প্রকাশ করা হয়। শোকবাণীতে উপাঁচার্য বলেন, অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এবং প্রথিতযশা শিক্ষক ও গবেষক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, উদার, মানবিক, সজ্জন, নম্র ও বিনয়ী এই গুণী শিক্ষক জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। তাঁর ৮০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিভাগীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কাছে তিনি ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক ঢাবি জীববিজ্ঞান অনুষদের ৪ বারের ডিন, সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ উদ্ভিদবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্ল্যান্ট টিস্যু কালচার অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অত্যন্ত সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। উদ্ভিদবিজ্ঞানের উন্নয়ন ও গবেষণায় অসাধারণ অবদানের জন্য এই স্বনামধন্য উদ্ভিদবিজ্ঞানী স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে উপাঁচার্য উল্লেখ করেন। উপাঁচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।