গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়নের কেন্দুয়াব গ্রামে পারিবারিক শত্রুতার জেরে দেড় বিঘা জমির রোপা আমন ধান নষ্ট করে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ বিষয়ে দোষীদের বিচার চেয়ে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভাগী মৃত গিয়াসউদ্দিন সরকারের ছেলে মেঃ রমজান আলী (৬৫) ও এলাকাবাসী। মোঃ রমজান আলী জানান, তার বাড়ির দক্ষিণ পাশে এক বিঘা ও উত্তর পাশে আধা বিঘা ধান ক্ষেতপ আমন মৌসুমের শুরুতে আমন-৫১ ধানের চারা রোপন করেছেন। নিজে ও ছেলেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। ধানগাছ গুলো ইতোমধ্যে কঁচি ধানের শীষে ভরে গেছে। গত বুধবার খুব ভোরে একই এলাকার মৃত গিয়াসউদ্দিন আকন্দের তিন ছেলে মোঃ চাঁন মিয়া, মোঃ সুরুজ আলী, মোঃ আবদুর রহিম এবং চাঁন মিয়ার ছেলে টোক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ আবদুল গফুর স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে দুটি ক্ষেতে বিষ প্রয়োগ করেছে। ফলে ওই দেড় বিঘা জমির সব ধান এবং ধানগাছ মরে শুকিয়ে গেছে। রমজান আলীর স্ত্রী মোসাঃ রোকেয়া বেগম জানান, বুধবার খুব ভোরে গোয়াল ঘর থেকে গরু বের করে ওই ধান ক্ষেতের কাছে গিয়ে দেখত পান চারজন লোক তাদের ক্ষেতে স্প্রে মেশিন দিয়ে বিষ প্রয়োগ করছে। তখন তিনি ডাক চিৎকার শুরু করলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের চারজনকে এলাকাবাসীসহ তিনি চিনতে পেরেছেন। তিনি আহাজারি করে বলেন, ওই দুটি ক্ষেতের ধান তার নয়জন পরিবারের সদস্যের প্রায় ৬ মাসের ভাতের সংস্থান হয়। এ বছর নিয়ে গত তিন বছর ধরে তাদের দুটি ধান ক্ষেতে একই লোকেরা বিষ প্রয়োগ করে তাদের ভাতের কষ্টে ফেলে দিছে। অথচ তার স্বামী বয়সের ভারে পরের জমিতে কাজ করতে পারেন না। ছেলেরাও সম্পূর্ণ বেকার জীবন যাপন করছে। দুর্মূল্যর এই বাজারে এখন কীভাবে তার সংসার চলবে তা তিনি কল্পনা করতে পারেন না। রমজান আলীর চাচাত ভাই মোঃ রফিক জানান, তিনি ও রমজান আলী প্রায় দুই বছর আগে ওই ধানক্ষেতের উত্তরপাশের প্রায় আড়াই বিঘা জমি মোঃ সুরুজ আলীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা বায়না দলিলের মাধ্যমে কিনেছিলেন। সুরুজ আলী পরবর্তী সময় ওই জমি সাফ কবলা দলিল করে দিছে না এবং বায়নার টাকাও ফেরত দিছে না। এ নিয়ে তাদের মাঝে বেশ কয়েক বার শালিশ বৈঠক হলেও এখনো তারা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এমনকি তাদের প্রায় ১ বিঘা ১ গন্ডা জমির অপর একটি ধানক্ষেতে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের বলে দাবি করেছে। পরে আদালতে মামলার রায়ে তারা ওই জমি দখল করতে গেলে তাতেও তারা বাঁধা দিচ্ছে। জমি সংক্রান্ত এ বিরোধের জেরে তিন বছর যাবৎ রমজান আলীর দেড় বিঘা ধানক্ষেতে বিষ প্রয়োগে নষ্ট করে দিয়েছে। প্রতিবেশী আঃ রশিদ সরকার (৭০) জানান, প্রতিপক্ষের লোকজন রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে পর পর তিন বছর ধরে দরিদ্র এই পরিবারের লোকজনের ধান ক্ষেত ও গবাদি পশুর খড়কুটা নষ্ট করে দিয়ছে। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্য টোক শরীফ মোমতাজ উদ্দীন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ আবদুল গফুর জানান, তিনি এবং তার বাবা বা চাচারা কেউ বিষ প্রয়োগের সাথে জড়িত নন। বরং জমি সংক্রান্ত মামলায় জিততে প্রতিপক্ষের লোকজন নিজেরাই নিজেদের ধানক্ষেতে বিষ প্রয়োগ করে তাদের ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়ে উপজলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক জানান, বিষ প্রয়োগে ধানক্ষেত নষ্ট করা অনেক বড় একটি অপরাধ। এ বিষয়ে অভিযাগ পেলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্যাপশনঃ সংবাদ সম্মলন ও ধানক্ষেতের ছবি মেইলে দেওয়া আছে।