মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। গত কয়েক দিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশো মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। প্রায় প্রতিদিনই ভুক্তভোগীরা ভিড় করছেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসে। সমাজসেবা কর্মকর্তা বলছেন এই ধরনের প্রতারণা রোধে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। খবর নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নগদের মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ভাতার টাকার পাচ্ছে গজারিয়া উপজেলার উপকারভোগীরা। এর আগে ভাতার টাকা তুলতে উপকারভোগীদের ব্যাংকে যেতে হতো। তবে ডিজিটালাইজেশন হওয়ার পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একটি চক্র উপকারভোগীদের কাছ থেকে ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রথমে ফোন করে অ্যাকাউন্টের পিন নাম্বার চাইলেও এখন ওটিপির মাধ্যমে নিমেষে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে প্রতারক চক্রটি। গত কয়েকদিনে গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শত শত মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়েছে। ভুক্তভোগী ভবেরচর ইউনিয়নের ভিটিকান্দি গ্রামের আশির্ধ্বো আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবন্ধী হিসেবে প্রতিমাসে ৮৫০ টাকা করে তিন মাস পর পর ২৫৫০ টাকা ভাতা পেতেন তিনি। এবার টাকা তুলতে গিয়ে শুনেন তার মোবাইল ব্যাংকিং এর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অভাবের সংসারে ভাতার টাকায় দিয়ে তিনি ঔষধপত্র কিনতেন এখন কিভাবে তিনি ওষুধ কিনবেন এ নিয়ে চিন্তার ভাজ তার কপালে। তিনি মোবাইল ব্যবহার করতে পারেন না আর তার পরিবারের কেউ প্রতারক চক্রকে ওটিপি দিয়েছেন কিনা তিনি তা জানেন না। ভিটিকান্দি গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী শারীরিক প্রতিবন্ধী খোরশেদ আলম বলেন, কয়েকদিন আগে কেউ একজন ফোন দিয়ে নিজেকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তার ভাতার টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে এ কথা জানান। এজন্য তার মোবাইলে একটি কোড যাবে যা তাকে দেওয়ার জন্য বলে। তিনি সরল মনে বিশ্বাস করে ওটিপি দেওয়ার পর তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চলে যায়। তিনি শুধু নন তার গ্রামের অন্তত সাত জন এরকম প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে জানান তিনি। ভবেরচর গ্রামের বাসিন্দা হাফেজা বেগম বলেন, আমি মোবাইলের কিছুই বুঝিনা। কিছুদিন আগে ভাতার টাকা বাড়িয়ে দেবে বলে একটা ফোন আসে যা আমার মেয়ে রিসিভ করে। পরবর্তীতে ফোনে একটি কোড আসে যা ওদেরকে দেওয়ার পরে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যায়। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জানা যাবেন বলে জানান। গজারিয়া উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মনসুর আলম বলেন, গত কয়েকদিনে প্রতারক চক্র কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন এরকম বেশ কয়েকজন মানুষ আমাদের অফিসে এসেছেন। আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে কেউ ভাতা ভোগীদের ফোন করে কখনো পিন কোড অথবা ওটিপি চাইবে না। প্রতারণার রোধে এ বিষয়ে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোল্লা সোহেব আলী বলেন, এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৯৮৭১ জন ভাতা পাচ্ছেন। তার মধ্যে বয়স্ক ৫৬৩৫ জন, বিধবা ১৯০১ জন, প্রতিবন্ধী ২২০৫ জন এবং অনগ্রসর হিসেবে ১৩০ জন ভাতা পাচ্ছেন। বয়স্করা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ১৮০০ টাকা, বিধবারা ১৬৫০ টাকা, প্রতিবন্ধীরা ২৫৫০ টাকা এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ১৬৫০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।