বিএনপিসহ বিরোধী দলের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিন ও বাম জোটের সকাল সন্ধ্যা হরতালে যাত্রী সংকট থাকায় গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। লোকাল বাস চলাচল করলেও যাত্রী সংকট রয়েছে পরিবহনগুলোতে। তবে গাবতলী প্রধান সড়কে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের খন্ড- খন্ড- মিছিল সকাল থেকে অব্যাহত রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। গাবতলীতে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে দূরপাল্লার গাড়িগুলো প্রস্তুত রাখা হলেও যাত্রী না থাকায় কোনো পরিবহনই গাবতলী ছেড়ে যায়নি। যাত্রী না থাকায় বেশির ভাগ বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। দু চারটি কাউন্টার খোলা থাকলেও যাত্রী পাঁচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে গোল্ডেন লাইনের কাউন্টার মাস্টার হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের পরিবহনের এখানে ছয়টি কাউন্টার থাকলেও পাঁচটি বন্ধ রয়েছে। একটি খোলা রাখা হলেও যাত্রী সংকট থাকায় দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে যদি যাত্রী পাই তাহলে গাড়ি ছাড়া হবে। একটি গাড়ি সড়কে বের করলে প্রচুর খরচ হয়। দুই একজন যাত্রী এলেও এটা দিয়ে খরচ উঠবে না বলে জানিয়েছেন কাউন্টার মাস্টার হাফিজুর। এ ব্যাপারে গাবতলীতে অবস্থিত ডিডি পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. আলমগীর বলেন, সকাল থেকে আমরা কাউন্টার খুলে বসে আছি কিন্তু যাত্রী না থাকায় দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। গতকালও (গত বুধবার) একই অবস্থা ছিল, আমরা প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু যাত্রী পাইনি। তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের দুটি গাড়ি ছাড়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে একটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এবং অন্যটি রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাবার কথা রয়েছে। সন্ধ্যার গাড়িতে দুটি এবং রাতের গাড়িতে পাঁচটি সিট বুকিং হয়েছে এ পর্যন্ত। সারাদিন পর বোঝা যাবে গাড়ি যাবে কি না। ৪০ জনের সিটে গাড়িতে দুই থেকে পাঁচ জন নিয়ে তো আর যাওয়া যায় না। তবে সিট ফিলাপ না হলে অনেক সময় গাড়ি ছাড়া হচ্ছে না। বুকিং ক্যানসেল করতে হচ্ছে, এতে যাত্রীদেরও অনেক কথা শুনতে হয়। যদিও আমরা চেষ্টা করি যে, অন্য কোনো গাড়ি ছেড়ে গেছে সেখানে এ যাত্রীদের তুলে দিতে। একটা গাড়িতে খরচ অনেক যাত্রী না থাকায় গাড়ি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালেন সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মইনউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের ডিউটি পালন করছি, যাত্রী থাকলে অবশ্যই আমরা গাড়ি ছাড়বো। মা অসুস্থ পরিবার নিয়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম। কাউন্টারে এসে কোনো পরিবহন না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মা অসুস্থ কখন বাড়ি যাব এক ঘণ্টা ধরে কাউন্টারে ঘুরাঘুরি করছি, সরাসরি কোনো গাড়ি চলছে না। তাই ভেঙে ভেঙে হলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি যেতে হবে। এদিকে জনগণের নিরাপত্তা দিতে সকাল থেকেই মঞ্চ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গাবতলী বাস টার্মিনাল ও আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। মঞ্চগুলোতে ব্যান্ড সংগীত পরিবেশন হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, জনগণের জানমাল রক্ষায় এবং সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় সড়কের যান চলাচল কিছুটা কম রয়েছে।
মহাখালীর অধিকাংশ কাউন্টার বন্ধ: এদিকে অবরোধের কারণে যাত্রী কম, তাই টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়ছে কম। টার্মিনালে বাস রাখার জায়গা নেই। সড়ক, তেলের পাম্প আশপাশের গলিতে জায়গা হয়েছে বাসের। অধিকাংশ কাউন্টারই বন্ধ। যেসব কাউন্টার খোলা সেগুলোর ড্রাইভার, হেলপার ও কর্মীরাও অলস সময় কাটাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াতের পঞ্চম ধাপের অবরোধের দ্বিতীয় দিন ও অন্য কয়েকটি দলের হরতালে বৃহস্পতিবার সকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রতিদিন মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ৭০০’র অধিক বাস-মিনিবাস দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ছেড়ে যায়। অবরোধের কারণে ছেড়ে যাওয়া গাড়ির সংখ্যা নেমেছে ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ তে। মহাখালী টার্মিনালে এনা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সুমন মাহমুদ জানান, তাদের গড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। কিন্তু যাত্রী না থাকার কারণে ছেড়ে যাওয়া বাসের সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগে নেমেছে। স্বাভাবিক কর্মদিবসে প্রতিদিন ১০০ এর বেশি বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। অবরোধে সারাদিনে ৩০টি বাসই ছাড়তে পারছি না। ৪০টি সিটের বাস। ২৫-৩০ জন যাত্রী পেলেই বাস ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু সে যাত্রীও পাঁচ্ছি না, জানান সুমন। কথা বলতে বলতে একজন আশা কাউন্টারে হাজির হন। তিনি ময়মনসিংহে যাবেন। মেরাজুল নামের যাত্রীকে কাউন্টার থেকে বলা হয়, বসেন, ৩০ জন যাত্রী হলেই বাস ছাড়া হবে। এমন অবস্থা দেখা গেলো একতা কাউন্টারেরও। মহাখালীর অর্ধেকের বেশি কাউন্টার বন্ধ। অবরোধের কারণে এসব কাউন্টার থেকে কোনো গাড়ি ছাড়বে না। টার্মিনালে ড্রাইভার, হেলপার অলস বসে আছেন। কেউ রাতে দেরিতে ঘুমিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৯টা বেজে গেলেও ঘুমাচ্ছেন। বাস ছাড়ার তাড়া নেই, যাত্রীর বসার চাপ নেই; আরামে ঘুমাচ্ছেন পরিবহনের শ্রমিকরা। দুয়েকজন যাত্রী এলেও কাউন্টার টার্মিনালে ঘোরাফেরা করছেন। নন-এসির সাধারণ যাত্রী কিছু মিললেও তুলনামূলক সচ্ছল যাত্রী, যারা এসি বাসে চলাচল করেন, অবরোধ-হরতালে এমন কোনো যাত্রীর দেখা মেলেনি। এসি বাস কাউন্টার বা বিলাসবহুল বাসের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেলে এমন কোনো যাত্রীই আসছেন না অবরোধে। তাদের নিজেদেরও এ ধরনের দামি বাস ছাড়ার কোনো ইচ্ছে বা সিদ্ধান্ত নেই। এনা বাস কাউন্টারে দেখা যায়, একজনই বিক্রয় কর্মকর্তা বসে আছের। কোনো যাত্রীর অপেক্ষা নেই, নেই সেবা দেওয়ার কোনো লোকও। পুরো কক্ষটি ফাঁকা। এদিকে বাস না ছাড়ার কারণে বাস রাখার জায়গা নেই মহাখালী বাস টার্মিনালে। বাস রাখা হয়েছে সড়কের পাশে। একটির পেছনে আরেকটি রাখতে রাখতে বাসের সারি মহাখালি মোড় থেকে রসুলবাগ, তেজগাঁও লিংক রোড হয়ে চ্যানেল আই-এর সামনের প্রধান সড়ক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। মহাখালি বাস টার্মিনালের সামনে সড়াকের ফাঁকা জায়গা পাওয়া মুশকিল হচ্ছে। অবরোধের সঙ্গে হরতাল যোগ হওয়ার পরও শহরের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা কমেনি। সংখ্যায় কম হলেও বাস, মিনিবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা চলাচল করেছে আজ বৃহস্পতিবার। চলেছে পণ্যবাহী ছোট্ট ট্রাকও। অবরোধ-হরতালে মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে প্রাইভেটকার। বেড়ে যায় রিকশা চলাচল ও হেঁটে যাওয়া মানুষের সংখ্যা। এদিকে মাঝেমধ্যে হর্ন বাজিয়ে সতর্ক টহল দিতে দেখা যায় বিজিবির গাড়িকে। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক, তেজগাঁও, বেগম রোকেয়া সরণি, বিজয় সরণি-ফার্মগেট- কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ সড়কে গাড়ি চলাচল করেছে। তবে তা সংখ্যায় কম। গণপরিবহনের সংখ্যা হাতেগোনা। সবচেয়ে বেশি চলে প্রাইভেটকার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের পরিবহনের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।