নীলফামারীর সৈয়দপুর নামে শুধু মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে নেই কোনো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। নেই অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকায় ১১ বছর ধরে পড়ে রয়েছে তা গ্যারেজে। সরকারী ওই গাড়ী গ্যারেজে নষ্ট হচ্ছে। একজন মেডিকেল অফিসার যিনি প্রায়ই সময় থাকেন না কেন্দ্রে। প্রতিদিন সেবা নিতে আসা রোগিরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। দূর দুরান্ত থেকে আসা রোগি সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকটা কোন রকমে খুঁড়িয়ে চলছে এটির সেবাদান কার্যক্রম।
এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি সম্পর্কে অনেকেরই কোন ধারণা না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে সেবা প্রত্যাশীরা বাধ্য হচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে। সেখানে তাদের পকেট কাটা হচ্ছে। কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের এমন অভিযোগ। সৈয়দপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সৈয়দপুর পৌরসভা ভবনের সামনে, বিপরীত দিকে প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর এটির অবস্থান। গর্ভবতী মা ও শিশুদের চিকিৎসা সেবার জন্য ১০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি এ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার একজন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শিকা, নার্স ও সুইপার পদ শূণ্য। কেন্দ্রে কর্মরত শুধু একজন মেডিকেল অফিসার। জানা যায়, ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি। দীর্ঘ ৬৫ বছর পেরিয়ে এসে ২০২৩ সালেও বাড়ানো হয়নি এর শয্যা সংখ্যা। অথচ জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
এটিতে গড়ে প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন প্রায় শতাধিক নারী। বিনা পয়সায় সন্তান প্রসব, লাইগেশনসহ নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে ১৬ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও মেলে না তার কিছুই।
চালকের পদ না থাকায় ১০ বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্সের চাকা ঘোরেনি। নেই রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাগার। একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও তা ব্যবহারে দক্ষ চিকিৎসক নেই। বাধ্য হয়েই ভরসা করতে হয় বেসরকারি ক্লিনিকের ওপর। দেখা গেছে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির কার্যক্রম চলছে জরাজীর্ণ একটি ভবনে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ক্লিনিকের সামনে ও ছাদে আগাছা জন্মেছে। ভবনের দেয়াল ও ছাদে ছত্রাক ও আগাছার ছড়াছড়ি। অফিস স্টাফরা গল্পগুজব করে সময় কাটাচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা এক গর্ভবতী জানান এখানে ডাক্তার দেখাতে এসে শুনি তিনি নীলফামারী গেছেন। এভাবে পরপর দু’দিন এসে ফিরে যাচ্ছি। আর এক নারী জানান, শিশুকে নিয়ে এখানে ডাক্তার দেখাতে এনেছিলাম। কিন্তু এসে শুনি এখানে কোন শিশু চিকিৎসক নেই। তাই নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র হলেও সেখানে নেই কোন শিশু বিশেষজ্ঞ। নেই অ্যানেস্থেশিয়ার কোনো ডাক্তার। এসব অভিযোগ স্বীকার করেন কেন্দ্রটির পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা।
ওই কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ সোহেল রানা। তিন দিন কেন্দ্র গিয়েও তার দেখা মেলেনি। তিনি নাকি বিশেষ কাজে নীলফামারী গেছেন। চিকিৎসকের অপেক্ষায় বারান্দায় বসেছিল অনেক রোগি।
ওই সময় তাদের হাতে দেখা যায় বেসরকারি মডার্ণ ল্যাবের পরীক্ষার ফাইল।
এ বিষয়ে এক রোগি জানান, মডার্ণ ল্যাবের ভিজিটিং কার্ড দেয়া হয় কেন্দ্র থেকে। বলা হয় পরীক্ষা গুলো সেখান থেকে করার। অথচ ওই কেন্দ্রের আঁশ পাশে রয়েছে অনেক ল্যাব। পাশের ল্যাবে পরীক্ষা করালে রোগির কোন রিক্সা ও অটো ভাড়া লাগে না। কিন্তু কেন্দ্র থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দুরে যেখানে যেতে রেগির ভাড়া লাগে যাতায়াত ৪০ টাকা।
অনেকটা রোগিকে হয়রানি করা হয়ে থাকে।
কেন্দ্রের চিকিৎসককে না পাওয়ায় তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।
তাই সৈয়দপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের অনিয়ম তদন্তের দাবি জানান অনেক রোগি।