জামালপুরের বকশীগঞ্জে আদিবাসী এক মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া ওয়ারিশ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতার অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের হস্তক্ষেপে ভাতার অর্থ উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের দীঘলকোনা গ্রামের মৃত জারং সাংমার ছেলে রুইন্দ্র মারাক মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের একমাত্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। রুইন্দ্র মারাকের মুক্তিযোদ্ধা সমন্বিত তালিকায় পরিচিতি নম্বর-০১৩৯০০০২৮৩৫, মুক্তিযোদ্ধার ভারতীয় তালিকা নম্বর-১৬৩১১ ও লাল মুক্তিবার্তা নম্বর-০১১৩০৭০৩৬৬ লিপিবদ্ধ আছে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৫ সালের ৩০ অক্টোবর রুইন্দ্র মারাক পরলোক গমন করেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান শুরু হলে বীরমুক্তিযোদ্ধা রইন্দ্র মারাকের শ্যালক লাউচাপড়া এলাকার এবেন্দ্র সাংমা নিজেকে প্রয়াত নিজ ভগ্নিপতি মুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাক নাম ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধা সেজে ভাতা উত্তোলন করতে থাকেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে এবেন্দ্র সাংমা পরলোক গমন করলে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার সময় তার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি সকলের নজরে আসে। এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এবেন্দ্র সাংমা নিজেকে রুইন্দ্র মারাক পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করলেও তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ হিসেবে এবেন্দ্র সাংমার স্ত্রী মিলন মারাক ও তার সন্তানরা ভাতা উত্তোলন করে আসছিলেন। এবেন্দ্র সাংমার নামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন বন্ধে মৃত বীরমুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাকের ছেলে সুবেন্দ্র মারাক গত ২০২৩ সালের ২১ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের কাছে আবেদন করলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক অভিযোগটি আমলে নিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বকশীগঞ্জ সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ভাতা উত্তোলন বন্ধ রাখার নিদের্শ দেন। সেই থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে মিলন মারাকের নামে ব্যাংক হিসাবটি লিয়েন করেন। অপরদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাকের একমাত্র সন্তান সুবেন্দ্র সাংমার জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম ভুলবশত রুইন্দ্র মারাকের স্থলে মহেন্দ্র মারাক লিপিবদ্ধ হওয়ায় সে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সুবেন্দ্র মারাক ভোটার আইডি কার্ডে বাবার নাম সংশোধনের জন্য একাধিকবার আবেদন করলেও মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়দানকারী এবেন্দ্র সাংমার ছেলে জয় দাংগোর বিরোধীতার কারণে সুবেন্দ্র সাংমার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন কার্যক্রম থমকে গেছে। কিন্তু স্থানীয় ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান মশিউর রহমান, ট্রাইবাল ওয়েলয়োর অ্যাসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান অনন্ত মারাক, যুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধের কোম্পানি কমান্ডার নুরল ইসলাম সুবেন্দ্র মারাকই বীরমুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাকের ছেলে বলে প্রত্যয়ণ পত্র দিয়েছেন। তবে জয় দাংগো নিজের ফুফা রুইন্দ্র মারাককে বাবা দাবি করেছেন। তিনি জানান, রুইন্দ্র মারাক ও এবেন্দ্র মারাক একই ব্যক্তি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও সেটা জানেন। বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম জানান, রইন্দ্র মারাক ও এবেন্দ্র সাংমা একই ব্যক্তি, নাকি পৃথক পৃথক ব্যক্তি তা নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত চলছে।