চাঁদপুরের প্রাচীন স্টার আল-কায়েদ জুটমিল ও ডব্লিউ রহমান জুটমিল দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকায় দ্রব্যমুল্যের এ দুর্দিনে কর্মহীন শতশত মিল শ্রমিকদের দুর্ভোগের শেষ নেই। দুটো মিলই চাঁদপুর জেলা শহরের বিখ্যাত বাণিজ্যিক এলাকা পুরানবাজারে অবস্থিত। ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে মনোরম ও শান্ত পরিবেশে অবস্থিত এ দুটি মিল। স্টার আলকায়েদ জুট মিলস দু বছর যাবত বন্ধ রয়েছে বলে জানান ব্যবস্থাপক শাহজাহান পাটোয়ারি। মিলটি শীঘ্রই আবার চালু হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, চালু হলে তখন প্রায় ৭শত লোকের কাজের সংস্থান হবে। মিলটি ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে প্রায় ৪০ একর জুড়ে অবস্থিত। মিল এলাকাটি যেনো সবুজের সমারোহ।অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতীর গাছপালা ও পাখির কলকাকলীতে মুখর হয়ে যায় সকাল- বিকেল।আছে বানর ও শিয়ালও। অন্যদিকে, ঠিক এর পূর্ব পাশেই অবস্থিত জেলার সর্ববৃহৎ জুট মিল-ডব্লিউ রহমান জুট মিলস লি:। “গত এপ্রিল থেকেই এ মিলটি বন্ধ রয়েছে’’ জানালেন এর কর্মচারিগন। এখানে ২৫০ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলো বলে জানান শফিকুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক। পাবনার একজন পাট ব্যবসায়ী ভাড়ায় চালাতো মিলটি। প্রায় ৬০ একর জুড়ে এ মিল। মিল চত্তরে রয়েছে হরেক রকমের হাজারো গাছ পালা। ভিতরে ঢুকলেই নানান রকমের পাখির ডাক শোনা যায়। সন্ধা হলেই রাতভর হুয়াক্কা হুয়া র আওয়াজ চলতে থাকে বলে জানান মিল ক্যাম্পাসে বসবাসরত আবাসিক স্টাফগন। উল্লেখ্য, এ দুটো মিলই ব্যক্তি মালিকানাধীন। দেশের স্বাধীনতার পর মিল দুটোই জাতীয়করণ করা হয়েছিলো। পরে আবার বিজাতীয়করন করে মুল মালিকদের কাছে মিলগুলো হস্তান্তর করা হয়। পরে বিজেএমসির তত্বাবধানে এসব মিলগুলো চলে যায়। পরে সেটা থেকেও মিলগুলোকে অবমুক্ত করে দেয়া হয় বলে জানান ডব্লিউ রহমান জুট মিলের প্রবীণ মিলস্টাফ সফিকুল ইসলামসহ অন্যরা। এরপর মিলগুলো অনেক বছর জুড়ে ব্যক্তি মালিকানার তত্ববধানেই চলতে থাকে। পরে মিল কর্তৃপক্ষ মিলগুলো ভাড়া দিয়ে মিলগুলো চালাচ্ছিলেন। জানা গেছে, দুটো মিলেই তৈরি হতো পাটের তৈরি সুতলী, চট, ব্যাগ, বস্তা ও অন্যান্য পাটজাত দ্রব্য। জনৈক পরিবহন মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, তার ৫টি ট্রাক দিয়ে প্রস্তুত করা এসব পাটের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। মিলগুলো বন্ধ থাকায় সেটা আর হচ্ছে না। একসময় এ মিল দুটোকে কেন্দ্র করে আশপাশে অনেক পাট ব্যবসায়ী পাটের রমরমা জমজমাট ব্যবসা করতো। অনেকগুলো পাটের গুদামও ছিলো। শত সহ¯্র লোকের কর্মসংস্থানও ছিলো। দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের জন্য খোলা হয়েছিলো সোনালী ব্যাংকের একটি সম্প্রসারিত শাখাও, যে ভবনটি গত চার দশক যাবত পরিত্যাক্ত। ধীরে ধীরে সেসব পাটের ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে গত প্রায় চার দশক যাবত। অনেক বিখ্যাত পাট ব্যবসায়ীরাও না ফেরার দেশে। আলাপচারিতায় মিলের কয়েকজন স্টাফ জানান, দেশে প্লাষ্টিকের তৈরি আকর্ষনীয় বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রী এসে পাটের স্থান দখল করে এর চাহিদার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। দেশে পাটের তৈরি বিভিন্ন ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজার মন্দা। প্লাস্টিক পণ্য ও পলিথিন সমস্ত বাজারগুলোকে দখল করে আছে। পাটের বেগ, বস্তা ব্যবহারের জন্য সরকারি নিয়ম কেউ তোয়াক্কা করছে না। ঘুরে ঘুরে দেখা গছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দুটি মিলের যন্ত্রপাতিগুলোতে মরিচা পড়ছে। মিল বন্ধ, তাই জনমানবহীন মিল ক্যাম্পাসগুলোর সর্বত্র শুনশান নীরবতা, যেনো ভূতের বাড়ি।বর্তমানে অযতœ অবহেলায় ঝোপ ঝাড়ে ভরে গেছে জুটমিল দুটি চারদিক। মিলগুলো চালু থাকলে এলাকাটি গম গম করতো, পথঘাট লোকে লোকারণ্য হতো, দোকানগুলোতে কাস্টমার আসতো বললেন টেইলর মাষ্টার মোস্তফা মিজি (৫৫)ও চা-পান-স্টেশনারী দোকানী কুদ্দুস মিয়াজি (৬০) ও এক সময়ের মিল শ্রমিক রুহুল আমিন মিয়া (৬৫)। মিলগুলো বন্ধ থাকায় আশপাশ এলাকাগুলো যেনো ভুতের বাড়ি। গলিতে রুপ নিয়েছে বললেন আশপাশের ২-৩ তিনটি খোলা দোকানের মালিক। আশপাশের ৮-১০টি দোকানও বন্ধ। নেই কোন লোকজন। মনে হয় ধর্মঘট চলছে। একই কথা জানালেন রিকশাচালক সিরাজ মিজি (৬০), নতুন দোকানী শিহাব মিজি (২৫) ও নৌকার মাঝিরা। মাঝিরা জানান, অনেক লোক নদী পাড়াপাড় করতাম। টাকা পাইতাম। এখনতো খা খা করে। কোন লোকই নাই। সারাদিনে ২০০-২৫০ টাকাও পাই না। মিল খোলা থাকলে দৈনিক ৪ থেকে ৫শত টাকাও পাওয়া যায়। চাঁদপুর নদী বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রাচীন এই দুটি পাটকল আদৌ চালু করা হবে কিনা তা অনিশ্চিত হলেও সরকার সরকারি উদ্যোগে আবারো প্রান ফিরে পেতে পারে বন্ধ থাকা চাঁদপুরের এই পাটকল দুটি।