তেঁতুলিয়ায় হরতাল অবরোধের প্রভাবে পর্যটকের সমাগম নেই। মৌমূসী ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন। জানা যায় ১শত ৩৭ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো পয়েন্ট মহানন্দার তীরে দাঁড়িয়ে খালি চোখে নানারঙ্গের বর্ণিল রূপে দেখা যায় পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরূপ নৈস্বর্গিক কাঞ্জনজক্সঘা পর্বতমালা। মেঘমুক্ত আকাশে ভোরের আলো ফুটার সংগে সংগে উত্তরের আকাশে খুব কাছাকাছি দেখা মেলে বরফ আচ্ছাদিত কাঞ্জনজক্সখা। সূর্যের আলো বাড়ার সাথে ক্ষনে ক্ষনে রূপ বদলায় এই পর্বতমালা। কখনো স্বর্ণের আবরন, কখনো ধূসর আকৃতি সহ নানান রূপে কাঞ্জনজক্সখার দৃশ্যপট আগন্তুক পর্যটকদের মন কাড়ে। সাধারণত ষড়ঋতুর দেশে কমবেশি প্রতিটি ঋতুতে কাঞ্জনজক্সখা পরিস্কার আকাশে ভেসে উঠে। তবে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে খুব স্বচ্ছভাবে দেখা মেলে। আর এই দু’মাস দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের ভিড় জমে। কিন্তু এমৌসূমে রাজনৈতিক উত্তাপে হরতাল অবরোধের প্রভাবে তেঁতুলিয়ার পর্যটন শিল্পে ধ্বস নেমেছে। পর্যটক সমাগম না হওয়ায় হোটেল-মোটেল সহ মৌসূমি ব্যবসায়ীদের উপর চরম প্রভাব পড়েছে। তেঁতুলিয়া স্কোয়ার আবাসিক এর স্বত্ত্বাধিকারী সাবেক ইউ’পি চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান বলেন, তেঁতুলিয়ায় পর্যটন শিল্পের মৌসূম হলো স্বল্প ময়াদি। সাধারণত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগুনা বেশি থাকে। কিন্তু এবছর রাজনৈতিক উত্তাপ হরতাল অবরোধের কারণে আশাতীত পর্যটক আসছে না। ফলে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী, পর্যটকবাহী সাধারণ যানবাহন, খাবার হোটেল ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তার মতে রাজনৈতিক সমস্যাগুলো হরতাল-অবরোধের বাহিরে অন্য কোনভাবে সমাধান হলে পর্যটন শিল্পের সংগে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতো। বাংলা হোটেলের মালিক আজিজুল হক বলেন, অন্যান্য বারের চেযে এ মৌসূমে হরতাল অবরোধের ভয়ে পর্যটক সমাগম নেই। ফলে ব্যবসায়িকভাবে মন্দা যাচ্ছে। তেঁতুলিয়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ নৈশ্য কোচ কাউন্ডার মালিক মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান-হরতাল অবরোধের কারণে দূরপাল্লার কোন পর্যটক বা যাত্রী পাওয়া যায় না। যদিও সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার হরতাল-অবরোধ মুক্ত থাকে কিন্তু তুলনামুলক পর্যটক আসে না। ফলে দূরপাল্লার গাড়ীর ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় টূরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক জালাল আহামেদ্ বলেন, অন্যান্য মৌসূমের তুলনায় এবছর হরতাল অবরোধে পর্যটক সমাগম খুম কম। তবে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে কিছুটা পর্যটকদের সমাগম ঘটে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়ায় পৌছানো ডে কোচ বা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পর্যটক পরিবার নিয়ে কষ্টসাধ্য বলছেন। ট্যূরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে জোর তদারকি রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফজরে রাব্বি বলেন, চলমান হরতাল অবরোধের কারণে তেঁতুলিয়া পর্যটন শিল্পের উপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। সাধারণত সপ্তাতে শুক্র ও শনিবার ব্যতিত অন্যান্য দিনে পর্যটক সমাগম নাই। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর লাগাতার অবরোধ ও হরতালে এখানে পর্যটক আসতে না পারায় মৌসূমি হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা অর্থনেতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এক কথায় পর্যটক না আসার কারণে এ অঞ্চলের মৌসূমি ব্যবসায়ীদের অনৈতিক চালিকা শক্তি মুখ থুপড়ে পড়েছে।