বাজারে সব কিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও একমাত্র ধানের দাম প্রতিনিয়ত কমছে। শৈলকুপার হাটবাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। চলতি আমন ধানের ভরা মৌসুমে বাজারে ধানের দাম কমতে থাকায় কৃষক এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকার ৩০ টাকা কেজি দরে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের ঘোষণা দিলেও তা এখনো শুরু হয়নি। আর এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে কম দামে ধান কিনে মজুদ করছে বলে অনেক কৃষকের অভিযোগ। এবারের আমন মৌসুম ছিল কৃষকদের জন্য সর্বোচ্চ খরচের বছর। খরার কারণে জমিতে সেচ দিতে হয়েছে বেশি। সেচযন্ত্রের জ¦ালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম রেকর্ড পর্যায়ে। একই সঙ্গে বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। অথচ সীমাহীন খরচের এই মৌসুম শেষে ধানের কাক্সিক্ষত দাম পাচ্ছেন না কৃষক। উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে তাদের দাবি। এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে আমন ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। তাতে প্রতি বিঘা জমিতে ৫ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে বলে কৃষকের দাবি।। উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ বাজার, শিতালী, হাটফাজিলপুর, রয়েড়া, ধাওডা, কচুয়া, খুলুমবাড়িয়া, কাতলাগাড়ি, ভাটই,শেখড়া, রামচন্দ্র পুর ও শৈলকুপা হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিমন ধান ১ হাজার থেকে ১১শ থেকে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে মণপ্রতি দেড় থেকে ২শ’ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকের। এতে কৃষকরা এখন হতাশ হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে চলতি আমন মৌসুমে শৈলকূপা উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা আমন ধান আবাদ করেছিল। কৃষকরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে আমন ধান উৎপাদনের খরচ বেশি হয়েছে। সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর সেচ, সার, কীটনাশক ও মজুরি বাড়ায় প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া বীজ ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে চড়া দামে। ধান পরিচর্যা, কাটা, শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই ও পরিবহনসহ অন্য সব ধরনের খরচও বাড়তি। কয়েক দফায় সবকিছুর দাম বাড়লেও ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। ধান বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচের চেয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কম দামে। বরিয়া গ্রামের ধান চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, আমি ১শ ২০শতক জমিতে ধান আবাদ করেছিলাম তাতে হিসাব করে দেখলাম প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৫ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে। একই কথা বলেনহাটু ভাঙা গ্রামের দীনবন্ধু। তিনি বলেন আমার ৮০ শতক জমিতে ২০ মন ধান হয়েছে। লাঙ্গল বাঁধ বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা জাহিদ নামের এক কৃষক জানাান সুদে মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৫বিঘা জমি ধান চাষ করেছিলাম, তাতে যে ধান হয়েছে তা বিক্রি করে সুদেমহাজনের টাকাও শোধ হবে না কি করব ভাবছি। বাজারে ধান বিক্রি করতে আনলাম ব্যবসায়ীরা বলে ধানের দাম কম। গত বাজারে যেধান সাড়ে ১২শ টাকায় বিক্রি করেছি সেই ধান ১১শ টাকা মণ দামে বিক্রি করলাম। লাঙ্গলবাঁধ বাজারের ধান ব্যবসায়ী সন্তোষ কুন্ডু বলেন, গত মৌসুমের ধান-চাল এখনো মজুত থেকে গেছে। মিলাররাও এখনো নতুন ধান কেনা শুরু করেননি। এজন্য ধানের বাজার নিম্নমুখী। কুশবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আজিজ খান বলেন, সরকার ধান ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও তা এখনো শুরু করেনি। এ ছাড়া যে নিয়মে সরকার ধান কিনে তাতে প্রকৃত কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারে না। সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরাই তাদের নিজেদের আত্মীয়স্বজন ও দলীয় কর্মীদের মাঝে ধান বিক্রি করে। তবে সরকারি ভাবে হাটবাজার থেকে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে নগদ টাকায় ধান কেনে তাহলে ধান চাষিরা লাভবান হবে। সরকার ধান না কেনায় ব্যাপারিরা এখন সিন্ডিকেট করে কম দামে ধান কিনছে।