জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার অংশে “মাতামুহুরী নদীর মৎস্যবৈচিত্র্য” শীর্ষক বিষয়ে গবেষণা পরিচালিত হয়। জানুয়ারী ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর পার্বত্য অংশে পরিচালিত গবেষণাটি পরিচালনা করেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বিশিষ্ট মৎস্য গবেষক ড. মোহাম্মদ আরশাদণ্ডউল-আলম। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনে আয়োজিত সেমিনারে ওই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম। ড. আরশাদ জানান মাতামুহুরী নদী মৎস্যবৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই নদীর পার্বত্য অংশে ৯৫ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ পাওয়া গেছে, যা অন্যান্য নদীর মৎস্যবৈচিত্র্যের তুলনায় বেশী। এই ৯৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৮৯ প্রজাতি দেশীয় এবং থাই সরপুঁটিসহ ছয় প্রজাতির বিদেশি মাছ রয়েছে। আইইউসিএন রেডলিস্ট অব বাংলাদেশ ২০১৫ এ থ্রেটেন্ড তালিকাভুক্ত ৬৪ প্রজাতির মাছের ২৪ প্রজাতির থ্রেটেন্ড মাছ মাতামুহুরী নদীতে রয়েছে। আইইউসিএন তালিকার ডেটা ডেফিসিয়েন্ট তালিকার “বারিলিয়াস বারিলা” (বারিলা), “বালিটোরা ব্রুসি” (বালিটোরা), “এলিওট্রিস লিওটিয়া” (ভূত বাইলা), “ওরাইজিয়াস ডানসিনা” (কাগজি গুড়া) এই চার প্রজাতির ডেটা ডেফিসিয়েন্ট মাছের উল্লেখযোগ্যে জনসংখ্যা এই নদীতে রয়েছে। দুই প্রজাতির এন্ডেঞ্জার্ড ক্যাটিগরিভূক্ত থ্রেটেন্ড মহাশোল “টর পুঁটিটোরা” (সোনালি মহাশোল) ও “নিওলিসোসিলাস হেক্সাগোনোলেপিস” (কপার মহাশোল) প্রজাতির মাছের উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা এই নদীতে দেখা গেছে। কপার মহাশোল মাছ বাংলাদেশে ইতঃপূর্বে শুধুমাত্র সাঙ্গু নদীতে পাওয়া গেছে, যা ড. আরশাদ প্রথম রেকর্ড করেন। সোনালি মহাশোল বাংলাদেশের কয়েকটি সীমান্ত অতিক্রমকারী নদীতে পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী এই মাছটির দেশীয় আবাস ও প্রজনন ক্ষেত্র বলে ধারণা করা যায়। সাঙ্গু-মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত এই নদীতে জীববৈচিত্র্য বিষয়ে ইতঃপূর্বে কোন গবেষণা হয়নি। নিরাপত্তাজনিত কারণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় নদীর উৎসের নিকটবর্তী অংশে জরিপ পরিচালনা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।