ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের প্রাতবাজার এলাকার বিএডিসি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের নেতৃত্ব নিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্ধ সংঘাতের রূপ ধারণ করেছে। ষ্ট্যান্ড দখলে নিতে মিছির আলী ও রাশেদেরে নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন করেছেন একটি পক্ষ। আর বর্তমানে দায়িত্বে থাকা হারূন ফরিদ রনিরা নিজেদের কমিটিকে বৈধ দাবী করে বলছেন তাদের কমিটি অবৈধ ও মনগড়া। পুলিশ বলছেন এখানে কমিটি দিবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটি। সরাইল তো মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত নয়।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় প্রেসক্লাবে সরাইল উপজেলা সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মালিক সমিতির ব্যানারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন উপজেলা সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও অটোটেম্পু মালিক সমিতির একটি অংশের সভাপতি মো. আবদুল্লাহ। লিখিত বক্তব্যে মো.আব্দুল্লাহ দাবি করেন সরাইল উপজেলায়, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও অটোটেম্পুর শ্রমিক রয়েছে এক হাজার আর মালিক রয়েছে ২২৫ জন। তাঁদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা, অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়া, যাত্রী, যানবাহন, এবং পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর মৌলভীবাজার থেকে আমরা দুটি সংগঠনের নিবন্ধন পেয়েছি। সেখানে মো. মিসির আলীকে সভপতি এবং রাশিদ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের শ্রমিক সংগঠন এবং আমাকে (মো.আবদুল্লাহ) সভাপতি আর আবদুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯ সদস্যের মালিক সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন তাদের ওই দুটি সংগঠন বৈধ। বর্তমানে বিএডিসি অটোরিকশা স্ট্যান্ড যারা দখলে রেখেছেন তাঁরা অবৈধ। তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রশাসনের সহায়তায় ওই স্ট্যান্ড পরিচালনা করতে চান। সংবাদ সম্মেলনে মিসির আলী বলেন, বিএডিসি স্যান্ডের অধিনে ২৫০ থেকে ৩০০ সিএনজি চালিত অটোরিকশা রয়েছে। এগুলো প্রতিদিন জেলা সদরে এবং উপজেলার অরূয়াইল-পাকশিমুল সড়কে চলাচল করে থাকে। প্রতিদিন একটি অটোরিকশা থেকে দুটি সংগঠনের নামে ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এতে প্রতিমাসে দুটি সংগঠনের আয় হয়ে থাকে দেড় লক্ষাধিক টাকা। এ টাকা দুটি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পকেটে যায়। আমরা দায়িত্ব নিলে এ টাকা শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যায় করা হবে। তিনি বলেন, ৪/৫ বছর আগে আমি এ স্ট্যান্ডের দায়িত্বে ছিলাম। তখন এর টাকা শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যায় করা হতো। একাধিক সূত্র জানায়, গত চার/পাঁচ বছর ধরে দুটি সংগঠন এ বিএসডিসি স্ট্যান্ডটি পরিচালনা করছেন। তাদের মধ্যে মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে আছেন হারূন মিয়া আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন রফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ মিয়া আর সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ রনি। বর্তমান শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ রনি মানবজমিনকে বলেন, আমরা জেলা কমিটির অধিনে আছি। জেলা কমিটির নির্দেশে আমরা চলি। আমাদের কমিটিই বৈধ। এখানে প্রতিদিন যে টাকা তা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন ও আপ্যায়নে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। বাকি টাকা শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যায় করা হয়।’ বর্তমান মালিক সমিতির সভাপতি হারূন মিয়া বলেন,‘চার বছর আগে তৎকালীর কমিটির দায়িত্বশীলদের ছত্রছায়ায় এই ষ্ট্যান্ডে ও আশপাশে মাদক জুয়াসহ নানা অনৈতিক কর্মকা- চলত। প্রতিবাদ করায় গত (১৩-০২-২০) বিএডিসি অটোরিকশা স্ট্যান্ড এলাকায় শাওনেওয়াজ রনির পিতা আবু বকর সিদ্দিক ওরফে রকেট মেম্বারকে কূপিয়ে হত্যা করে ফেলে ওই চক্রটি। রকেট মেম্বার হত্যা মামলার আসামীর নেতৃত্বে ভূয়া ও অবৈধ কমিটির দাবী তুলে ষ্ট্যান্ডটির দখল নিতে চাই একটি গ্রুপ। এখানে দুইটি বৈধ কমিটি কর্তৃক ষ্ট্যান্ড পরিচালনা কালে এমন দাবী তুলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পায়তারা করছেন একটি দল। এই সুযোগ কখনো দেয়া হবে না। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তাদের মধ্যে আগেও ঝামেলা হয়েছিল। নিস্পত্তি করেছি। সরাইলের কমিটিকে নিয়ন্ত্রণ করবের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অফিস। এখানে মৌলভীবাজার জেলা অফিসের দায়িত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা নয়। তারপরও উভয় গ্রুপের কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত দিব। বিষয়টি ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।