আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন ১৫৬ ময়মনসিংহ ১১, ভালুকা আসন থেকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগের অন্তত ২০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বিএনপি নির্বাচনে আসলে এই আসন থেকে বিএনপির পাচঁ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। ভালুকায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৩ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮৩ হাজার ১৯ জন ও মহিলা এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৪২ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১০২ টি। ১১ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এই আসনটি গঠিত। ভালুকা উপজেলায় তিন শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান অধ্যুষিত শিল্পনগরী। এই খাত থেকে ভালুকা বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপিতে উল্ল্যেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০১ পর্যন্ত আসনটি আওয়ামী বিরোধী শিবিরের দখলে ছিলো। ২০০৬ সালের পর এই আসনটি চলে যায় আ.লীগের দখলে। বর্তমানে এ আসনটি আ.লীগের ঘাঁটি বলে দাবী করে সরকার দলীয় প্রার্থীরা। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সাড়াদেশের বিভিন্ন স্থানের প্রায় ২০ লাখ লোক ভালুকায় বসবাস করেন। যে কারণে এ আসনটি গুরুত্বপূর্ন হিসাবে ধরা হয়। ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সনের নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থী ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট মোস্তফা এমএ মতিন নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। ১৯৭৯ সালে মুসলিমলীগ থেকে আফতাব উদ্দিন চৌধুরী চাঁন মিয়া ও ১৯৮৬ সালে তার বড় ছেলে আমান উল্লাহ চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেজর (অব:) আবদুল হামিদ বিএনপি প্রার্থী আমান উল্লাহ চৌধুরীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ১৯৯১ সনে বিএনপি প্রার্থী আমান উল্লাহ চৌধুরী নির্র্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে থেকে আ.লীগ প্রার্থী ডা. এম আমান উল্লাহ এ আসন থেকে চার বার এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সনে আ.লীগ প্রার্থী কাজিমউদ্দিন আহম্মেদ ধনু বিএনপি প্রার্থী ফখরউদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ভালুকা উপজেলায় আ.লীগের কয়েকটি গ্রুপ থাকলেও দলীয় কর্মসূচি এক সাথে পালন করে তারা। মনোনয়নের জন্য আবারো চেষ্টা করে চলেছেন বর্তমান এমপি আলহাজ¦ কাজিম উদ্দিন আহম্মদ ধনু,। আ,লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম মোস্তফা,মহিলা এমপি মনিরা সুলতানা মনি, ডেপুটি এ্যাটর্নী জেনারেল শাহ আশরাফুল হক জজ, ময়মনসিংহ জেলা আ.লীগের সহসভাপতি আলহাজ¦ এমএ ওয়াহেদ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. কেবিএম হাদিউজ্জামান সেলিম, জেলা আ.লীগের কোষাধ্যক্ষ হাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মনিপুরি ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি সাহাদাত ইসলাম চৌধুরী মিন্টু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা আসাদুজ্জামান বিপ্লব, সাবেক এমপি অধ্যাপক এম আমান উল্যাহর স্ত্রী ডাক্তার সায়িদা আক্তার,অ্যাডভোকেট রাখাল চন্দ্র সরকার,যুবলীগ সভাপতি আনিচুর রহমান রিপন ও সাধারন সম্পাদক এজাদুল হক পারুল সহ ২০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বর্তমানে ভালুকায় বিএনপি দু’ভাগে বিভক্ত এক গ্রুপের নেতৃত্বে ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু ও অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। দলীয় কর্মসূচি পৃথক ভাবে পালন করে তারা। সম্প্রতি মোর্শেদ আলম গ্রুপ বেশ চাঙ্গা। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলায় আসামি হওয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনেই সীমাবদ্ধ থাকেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি থেকে যে পাঁচ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যায়,তার হলেন ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মুর্শেদ আলম,সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ার আজিজ টুটুল,মোস্তাফিজুর রহমান মামুন কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য স্বেচ্ছাসেবকদল ও ময়মনসিংহ জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক খান। ভোটারদের ধারনা নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দু,দলই সঠিক প্রার্থী দিতে পারলে আ.লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডী লড়াই হবে। এমপি আলহাজ¦ কাজিম উদ্দিন আহম্মদ ধনু বলেন, তিনি ছাত্রলীগের সেক্রেটারী ও সভাপতি, যুবলীগের সেক্রেটারী ও সভাপতি, একবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও একবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত চার বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বর্তমানে ভালুকায় প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার কাজ চলমান। মহিলা সংসদ (ময়মনসিংহ) সদস্য মনিরা সুলতানা বলেন, তিনি মুমিনুন্নেছা কলেজের ছাত্র সংসদে ৩ বার ভিপি, দুইবার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা সংসদ (ময়মনসিংহ) সদস্য হিসাবে এলাকায় মানুষের পাশে থেকে সেবা করে যাচ্ছেন। আগামীতেও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যেতে চান। উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ গোলাম মোস্তফা বলেন, ভালুকার আসনটি আ.লীগের ঘাটি। ১৯৯৬ থেকে অদ্যবদি নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। ত্যাগী নেতা কর্মীদের মাঝ থেকে যাচাই করে মনোনয়ন দিলে আসনটি পুনরায় আ.লীগ বিজয়ী হবে। জেলা আ.লীগের সহসভাপতি আলহাজ¦ এমএ ওয়াহেদ বলেন, তিনি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকেই মানুষের সেবা ও সমাজের উন্নয়নধর্মী কর্মকা- করে আসছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ও জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন বিশ্বস্থ কর্মী হিসেবে তিনি আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ কেবিএম হাদিউজ্জামান সেলিমবলেন,তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্বাচিপের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক কর্মী হিসেবে তিনি মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পেলে তিনি ভালুকার আসনটি আবারো জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দেলনের ভালুকার আহ্বায়ক ঢাকাস্থ ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমিতির সাধারন সম্পাদক, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহ আশরাফুল হক জজ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আধুনিক ডিজিটাল দেশে পরিনত করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন সহযোগী হয়ে পাশে থাকতে চান। দুইবার নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু বলেন, তিনি স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করেছেন। দুই বার বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনপ্রিয়তার শীর্ষের ব্যাক্তিকে মনোনয়ন দিলে নৌকা এবারো বিজয়ী হবে। কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিপ্লব বলেন, মইন উ আহম্মেদের সময়ে তিনি কারা নির্যাতিত হয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সকল কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তা বাস্তবায়নে যাকে মনোনয়ন দিবেন তাকে বিজয়ী করে নেত্রীকে নোকার এ আসনটি উপহার দিতে চান। চারবারের সাবেক সাংসদ অধ্যাপক ডা. এম আমান উল্লাহর ছেলে ঢাকা ল্যাবএইড হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. মোনাসির সাকিফ আমান উল্লাহ বলেন,জননেত্রী শেখ হাসিনার যে পরিকল্পনা ভালুকা উপজেলার উন্নয়ন ও ভালুকা উপজেলা আ’ লীগের ভবিষ্যত নিয়ে, তা বাস্তবায়ন করার লক্ষে তিনি কাজ করতে চান। ঢাকা মনিপুরি ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি শাহাৎ ইসলাম চৌধুরী মিন্টু বলেন, তিনি ১৯৮৫ ও ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন করে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মনিপুরী পাড়া ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চু বলেন, ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক দিয়ে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। তিনি বর্তমানে ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে বিএনপির থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছেন। মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বর্তমানে ভালুকা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক। ছাত্রদল দিয়ে তিনি বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। শিল্পনগরী হবিরবাড়ি ইউপি থেকে তিনি বিপুল ভোটে একবার চেয়াম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশ চেয়ারম্যান ফোরামের মহাসচিব নির্বাচিত হন। আন্দোলন সংগ্রামে তার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। অনোয়ার আজিজ টুটুুল ময়মনসিংহ জেলায় সিনিয়র আইনজীবি। ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ছাত্রদল দিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। অ্যাডভোকেট আজিজুল হক খান কৃষকদলের ময়মনসিংহ জেলার শাখার সভাপতি ছিলেন। ছাত্রদল দিয়ে তিনি বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। তরুন নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মামুন স্বেচ্ছাসেবকদল কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য। তিনি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। বিএনপির সম্ভ্যব্য প্রার্থীরা জানান,তারা একদফা আনন্দোল নিয়ে মাঠে রয়েছেন। নিরপেক্ষ সরকারের দাবী আদায় হলে নির্বাচন নিয়ে ভাববেন তারা। জাতীয় পার্টি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন মাষ্টার বলেন, দলের মনোনয়ন পেলে আধুনিক ভালুকা গড়তে তিনি ভূমিকা রাখবেন।