এই শীত মৌসুমে প্রতি বছরের মতোই রাজধানীতে আবাসিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত গ্যাসের সংকট চরমে উঠেছে। গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় নগরবাসীর রান্নাবান্না অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এক বেলা গ্যাস থাকলে আরেক বেলায় পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দিনের অধিকাংশ সময়ই গ্যাসের দেখা মিলছে না অনেক এলাকায়। সরবরাহ বৃদ্ধির পরও গৃহস্থালিতে কাটছে না গ্যাসের সংকট। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে গ্যাসের এই সংকট সার্বিক অর্থনীতি ও জন জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জুলাইয়ে সরকার যখন ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। এরপর থেকে বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহে রেশনিংয়ে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ১৬ অক্টোবর রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোবাংলা ৩ হাজার ৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন ২ হাজার ৬২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছে। গত কয়েক মাসে গ্যাস সরবরাহে গড় ঘাটতি প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। দেশে আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল রয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ নভেম্বর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুটি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে সামিট গ্রুপের ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে দিনেদিনে বাড়ছে ভোগান্তি। চলমান এই গ্যাস সংকটের কারণে গৃহস্থালির রান্নার কাজে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশেই এই সংকট চলছে। বিদ্যুৎ খাত দেশের মোট গ্যাস সরবরাহের ৪২ শতাংশ ব্যবহার করে। গত জুলাইয়ে গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় ৩০টি গ্যাসচালিত প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে। গ্যাসচালিত প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন দৈনিক ১১ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট থেকে কমে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হয়েছে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে লোডশেডিং বেড়ে দৈনিক ৬ ঘণ্টা হয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে একদিকে যেমন ভুগছেন সাধারণ মানুষ অপরদিকে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানার উৎপাদন। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের পোশাক খাতের এই খাতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন কমেছে শতকরা ২০-৩০ ভাগ । এমতাবস্থায় গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে হলে হয় উৎপাদন বাড়াতে হবে অথবা আমদানি বাড়াতে হবে। আমদানি বাড়ানো কঠিন কারণ বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ডলার সংকটে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৯টি চলমান প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। তাই এই অবস্থায় দেশে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন বাড়াতে হবে। তাছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের কোন উপায় নেই।